• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

‘ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হন তারা’


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মার্চ ৩, ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
‘ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হন তারা’

নারায়ণগঞ্জ : ঘটনার সময় সবাই ঘুমে ছিল৷ ঘুমন্ত অবস্থাতেই তারা দগ্ধ হন৷ ঘরের থেকে রান্নাঘর ১০ মিটার দূরে হলেও ঘরের পাশে গ্যাস রাইজার আছে৷ সেইখান থেকে গ্যাস লিক হইতে পারে৷ কথাগুলো বলছিলেন দগ্ধ রূপালির ভগ্নিপতি মোস্তাফিজুর রহমান রনি।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন দুই পরিবারের শিশুসহ আটজন। তাদের রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (৩ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম ধনকুন্ডা এলাকায় ইব্রাহিম খলিলের টিনসেড বাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছেন।

দগ্ধরা হলেন-রিকশাচালক হান্নান (৪০), তার স্ত্রী পোশাক শ্রমিক নুরজাহান আক্তার লাকী (৩০), মেয়ে জান্নাত (৩), মেয়ে সামিয়া (৯), ছেলে সাব্বির (১৬), আরেক পরিবারের পোশাক শ্রমিক সোহাগ (২৩), তার স্ত্রী পোশাক শ্রমিক রুপালি (২০) ও তাদের একমাত্র দেড় বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়া।

তাদের বেশিরভাগের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক জানিয়েছেন।

চিকিৎসকের বরাতে রূপালির ভগ্নিপতি মোস্তাফিজুর রহমান রনি বলেন, রূপালি, তার স্বামী সোহাগ ও একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া-তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসা চলছে। সুমাইয়াকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে৷

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি, দুই ঘরে আগুন আর ধোঁয়া। আশেপাশের লোকজনও আমার মতো বেরিয়ে আসে। পরে সবাই মিলে পানি দিয়ে আগুন নেভাই।

সোহাগ ও রূপালি দগ্ধ অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন৷ পরে দরজা ভেঙে বাকি দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এদিকে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, দুই কক্ষের সেমিপাকা টিনসেড ঘরের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে৷ সেখান থেকে কোনোভাবে গ্যাস লিকেজ হয় এবং এর থেকে ঘরের ভেতর গ্যাস চেম্বারের সৃষ্টি হয়৷ যে কোনোভাবে আগুনের স্পার্কের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে এবং অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়৷

বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলছেন, দগ্ধদের মধ্যে হান্নানের শরীরের ৪৫ শতাংশ, নুরজাহানের ২২ শতাংশ, জান্নাতের ৩ শতাংশ, সামিয়ার ৭ শতাংশ, সাব্বিরের ২৭ শতাংশ, সোহাগের ৪০ শতাংশ, রুপালির ৩৪ শতাংশ ও সুমাইয়ার ৪৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

ইনস্টিটিউটটির পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় আটজনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছে।

দগ্ধ লাকির ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, আগুন যখন লাগে, তখন সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থাতেই সবাই পুইড়া গেছে। ডাক্তার তো খোলাসা করে কিছু বলে না, কিন্তু সবার অবস্থায়ই আসলে খারাপ। পরিবারের পাঁচজনই দগ্ধ হইছেন। তারা বাঁচবো কিনা জানি না।

এর আগেও এই বাসার পাশে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে আনোয়ার বলেন, গত শুক্রবার আমার বোন জানিয়েছিল, গ্যাসের লিকেজ থেকে একটা বিস্ফোরণ হইছিল। তখনই ভয় পাইয়া গেছিল আমার বোন। এইটা বাড়িওয়ালারেও জানানো হইছিল। কিন্তু বাড়িওয়ালাও খুব একটা পাত্তা দেয় নাই। এইটা তার গাফিলতি ছিল। তখনই আশেপাশের বাড়িওয়ালারা গ্যাস লিকেজটা সারাইয়া ফেললে হয়তো এমনটা হইতো না।

তিনি আরও বলেন, রাত থেইকা হাসপাতালে আছি কিন্তু (হাসপাতালের) লোকজন আমাদের কথা খুব একটা শুনতেছেন না। কথা জিগাইলে উত্তরও দেয় না। সারারাত পর কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার লাইগা রক্ত নিতেছে। কিন্তু সারা সকাল কিছুই করে নাই। ভর্তি নিতেও দেরি করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ভাই, আমি নিজেও খুব মর্মাহত। কিভাবে কি হইছে, এইটা আমি জানি না। আমি তো ওই বাসায় থাকি না। আরেক বাসায় থাকি। আমি ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে হাসপাতালেই আছি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!