• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
সিলেট সিটি নির্বাচন

দলে বিভক্তি নেই, তবু অস্বস্তি কামরানের


সিলেট ব্যুারো জুলাই ১৮, ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম
দলে বিভক্তি নেই, তবু অস্বস্তি কামরানের

সিলেট : বিএনপির যেমন জামায়াত নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তেমন কোন সমস্যা নেই আওয়ামী লীগ প্রার্থি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের। গত নির্বাচনে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। বলা হয়ে থাকে, দলীয় বিভেদের কারণেই তার পরাজয় হয়। তবে এবার দলের নেতারা এক হয়েই মাঠে নেমেছেন তার পক্ষে। তার পরও আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর অস্বস্তির কারণ রয়ে গেছে।

সিলেট সিটি নির্বাচনে কামরান সর্বশেষ জয়ী হন এক দশক আগে। ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বিন্দ্বীতা করেন কারাবন্দি অবস্থায়। নানা সমালোচনা সত্ত্বেও বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। সেবার কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক মহিউদ্দিন শীরু। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে কামরানের জনপ্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, কামরানকে কেউ আগে সালাম দিতে পারে না। তিনিই সবাইকে আগে সালাম দেন। সিলেটের লোকজন রাস্তাঘাট উন্নয়নের চেয়ে বেশি চান ভালো ব্যবহার ও সম্মান। কামরান সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন বলে সিলেটবাসীও তাকে পছন্দ করে।

ততটা উন্নয়নমুখী নন, এমন অভিযোগ সত্ত্বেও সবার সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে প্রায় ১৭ বছর সিলেট সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যান ছিলেন কামরান। ‘এ শহরের প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান’ এমন স্লোগান দিয়ে থাকেন তার সমর্থকরা। তবে সিলেট শহরের এ ‘প্রিয় নামটি’ হেরে যায় গত নির্বাচনে।

কামরানের পরাজয়ের পেছনে অনেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভেদকে দায়ী করেন। সেবার দলের অনেক নেতা তার পক্ষে কাজ করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। ভোটের পরিসংখ্যানেও এর সত্যতা মেলে। ২০১৩ সালে সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৭ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পান আরিফুল হক চৌধুরী। কামরান পান ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। আর ১ লাখ ১০ হাজার ৫২২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। বলা হয়ে থাকে, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া এসব ভোটারের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও কামরানের ভোটার।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত নির্বাচনে দলের অনেক নেতা কামরানের বিরুদ্ধে থাকায় তাদের অনুসারীরা ভোট দিতে যাননি। এছাড়া কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না হওয়ায় কামরানের অনেক সমর্থকও ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। উপরন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হলেও গত নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে কামরানের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিভিন্ন কেন্দ্রে নিজেদের অনুসারীদের এজেন্ট করলেও কামরানের সঙ্গে দূরত্ব থাকায় ভোটের দিন তাদের কেন্দ্রে আসা থেকে বিরত রাখেন।

অনেকের মতে, কামরানের সঙ্গে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দূরত্ব দীর্ঘদিনের। এ দূরত্বের সুযোগে গতবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে আরিফুল হক চৌধুরী সখ্য গড়ে তোলেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজের সঙ্গেও কামরানের বিরোধিতার কথা শোনা যায়। এবার কামরানের পাশাপাশি মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচ নেতা দলীয় মনোনয়ন দাবি করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন মেয়র প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে বিভিন্ন মতভেদ থাকতে পারে। অনেকে প্রার্থী হতে চাইতে পারেন। কিন্তু কোনো বিভক্তি নেই। সিলেট আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত। ৩০ তারিখের নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

এবার অবশ্য শুরু থেকেই দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ নেন কামরান। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিও এতে উদ্যোগী হয়। দলীয় মনোনয়ন কেনার আগেই কামরান ছুটে যান অর্থমন্ত্রীর ঢাকার বাসায়। আরো চার প্রতিদ্বদ্বী থাকা সত্ত্বেও কামরানই দলীয় মনোনয়ন পান।

কামরানকে মনোনয়ন দেয়ার পর খোদ দলীয় সভানেত্রী সিলেটের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার পর বিভেদ ভুলে এখন পর্যন্ত কামরানের পক্ষেই মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সব নেতা।

তবে একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত নির্বাচনেও প্রকাশ্যে কামরানের পক্ষে ছিলেন আওয়ামী লীগের সব নেতা। কিন্তু ভোটের দিন তাদের অনুসারীরা কেন্দ্রে যাননি। এজেন্টের দায়িত্ব নিয়েও অনেকে পালন করেননি। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনের ফলাফলে। এবার সব নেতা কামরানের পক্ষে থাকলেও তারা কতটুকু আন্তরিক, তা বোঝা যাবে ভোটের দিন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা তার পক্ষে রয়েছি। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের সুযোগ নেই। সভানেত্রীর নির্দেশে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কামরানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

তবে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের দাবি, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হলেও এবার লাভ হবে না। তিনি বলেন, কামরান সালাম দিয়ে ও শুভেচ্ছা জানিয়ে ১৭ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। কোনো উন্নয়ন করেননি। অথচ আরিফুল হক মাত্র দুই বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। এ দুই বছরে তিনি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন। ফলে এবার ভোটাররা যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!