• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

লেনদেন ভারসাম্যে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে, জানাল মুডিস


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম
লেনদেন ভারসাম্যে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে, জানাল মুডিস

ঢাকা : লেনদেন ভারসাম্যে (বিওপি) বাংলাদেশ মাঝারি ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস।

সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের ‘বি১’ ঋণমান বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি। সম্প্রতি প্রকাশিত মুডিসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গত মে মাসে মুডিস ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ নামিয়ে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’ দিয়েছিল। 

২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। কিন্তু এরপর থেকে কমতে থাকে রিজার্ভ। আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়েও নানা কারণে রিজার্ভের পতন আর ঠেকানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে।

রিজার্ভের এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের সংকটে মাঝারি ধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের লেনদেনের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের হিসাব করা হয়ে থাকে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের ভিত্তিতে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের চিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমদানি কমায় চলতি হিসাবে ৮৯ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ক্ষেত্রে ৩৬৮ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।

তবে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমে গেছে। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধও বেড়েছে। ফলে ৪০০ কোটি ডলারের ঘাটতি রয়েছে আর্থিক হিসাবে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ২৮৫ কোটি ডলারের বেশি।

দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মুডিস বলেছে, রপ্তানি খাত বৈচিত্র্যময় ও বড় থাকায় এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভালো হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে রয়েছে ভারত। তবে রপ্তানি কিছুসংখ্যক পণ্যে কেন্দ্রীভূত থাকায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাচ্ছে।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানি কম। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় জিডিপির ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর পাকিস্তানের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ভারতের রপ্তানি আয় জিডিপির ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। অবশ্য শ্রীলঙ্কার এই অনুপাত ভারতের প্রায় কাছাকাছি- জিডিপির ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।

মুডিস আরও বলছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো ভারতের তুলনায় দুর্বল। ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও দেশগুলোতে বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫৯৫ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবর শেষে পাকিস্তানের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত ৩ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

মুডিসের মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ভিত্তি ভালো। ফলে পোশাক রপ্তানিতে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে রপ্তানি খাত কয়েকটি পণ্যে সীমিত থাকার পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কম হওয়ায় এ খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমতে পারে। ফলে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদে চলতি হিসাবে কাঠামোগত ঘাটতি থাকতে পারে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!