• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের নিয়োগে-পদোন্নতিতে ধীরগতি


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
প্রাথমিকের নিয়োগে-পদোন্নতিতে ধীরগতি

ঢাকা : প্রধান শিক্ষক পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটাই বিধি। কিন্তু নিয়োগে, পদোন্নতিতে ধীরগতি। এ কারণে দুরবস্থায় পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। কিছু সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে সে দুরবস্থা কাটানোর চেষ্টা করা হলেও কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না।

সূত্র জানায়, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজারের ওপরে। এর প্রায় ২৮ হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। বছর-দেড়েক আগে ১৮ হাজার বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর প্রায় ১০ হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ একেবারেই ফাঁকা।

জানা গেছে, গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়ার কাজ চলছে।

সম্প্রতি তিন জেলার কয়েকটি উপজেলায় কিছু শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এরপর নতুন পদোন্নতি হয়নি।

এখন প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত। তাই সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) হাতে। তারা পদোন্নতির সুপারিশে খুব ধীর। ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল ৮৯৮ জন। ৩৬তম থেকে ৩২৭, ৪১তম থেকে ২৭৬ ও ৪৩তম থেকে ২৭৬ জনকে সুপারিশ করেছিল পিএসসি।

সুপারিশপ্রাপ্ত নন-ক্যাডার প্রার্থীদের অনেকে কিছুদিন চাকরি করে অন্য চাকরিতে চলে যান। ২০১৩ সালের পর প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। প্রতিনিয়তই শিক্ষকরা অবসরে যাচ্ছেন। অবসরের গতির তুলনায় পদোন্নতি ও সরকারি নিয়োগের গতি কম। এভাবে চললে কখনই শূন্য পদ পূরণ হবে না।

প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চারজন শিক্ষকের একজনকে চলতি দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তাকে প্রায় প্রতিদিন উপজেলাপর্যায়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং নানা প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। আবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অধিকাংশ মহিলা হওয়ায় তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বা অন্য ছুটি কাটাতে হয়। অনেকে প্রশিক্ষণে থাকেন। ফলে চারজনের দুজনকে বিদ্যালয় চালাতে হয়। সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলে তাদের নির্দেশ মানেন না অনেক শিক্ষক।

গত পাঁচ বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন মো. জাকির হোসেন। তিনি কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ২৪০টি। এর ৩৮০টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক সংকটে বিঘিœত হচ্ছে তদারকি, শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, নিয়মিত পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বাসুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কনা খাতুন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে প্রায় দিন প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদরে শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। ফলে তার ক্লাসগুলো অন্য শিক্ষককে নিতে হয়। আর অন্য শিক্ষক ছুটিতে থাকলে অনেক ক্লাস নেওয়াই সম্ভব হয় না।’

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তা দশম গ্রেডে উন্নীত হয়নি। ফলে পিএসসির নন-ক্যাডার থেকে অনেক প্রার্থী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেও তারা কিছুদিন পর আর থাকেন না। সরকারি প্রাথমিকে পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মেধাবীরা আসতে চান না। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদে পদোন্নতির বিধান থাকলেও জটিলতার কারণে শূন্য পদে অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক পদোন্নতি পান না। আর প্রধান শিক্ষকরা পুরো চাকরি জীবনে কোনো পদোন্নতি পান না। পদোন্নতি ছাড়া এমন চাকরি আর আছে কি না আমার জানা নেই।’

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি। এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের সবাই উচ্চশিক্ষিত। বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ। অথচ বছরের পর বছর চাকরি করেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না, যা খুবই হতাশার। যদি পদোন্নতির জন্য লোকবলের সংকট থেকে থাকে তাহলে তা কাটিয়ে দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সালে সহকারী শিক্ষকদের এক রিটের কারণে প্রায় ১২ বছর প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ ছিল। দুই বছর আগে সে রিটের নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও আদালতের আদেশ মেনে জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করছে।

তবে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য রিট করেছেন। সে জটিলতার নিরসন এখনো হয়নি। পদোন্নতি দেওয়ার যে সুযোগ অধিদপ্তরের হাতে রয়েছে, কাজের ধীরগতির কারণে সেটাও তারা পূরণ করতে পারছে না। সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!