• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকের আখড়া বরিশাল বিএম কলেজ!


রুপন কর অজিত, বরিশাল জানুয়ারি ২১, ২০২৪, ০১:৫০ পিএম
মাদকের আখড়া বরিশাল বিএম কলেজ!

ছবি প্রতিনিধি

বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএম কলেজ এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিকেলে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসেই চলে এই রমরমা ব্যবসা। জানা যায়, কলেজ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায়ই চলে এই মাদক বিক্রি ও সেবন। এছাড়া বহিরাগতদের আদেশ নির্দেশেই চলছে এসব অসামাজিক কার্যকলাপ। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কয়েকটি হোস্টেল ও মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটতেই পাওয়া যাচ্ছে মাদকের তীব্র গন্ধ। কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই ঐতিহ্যবাহী কলেজটির এমন দশা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বহিরাগতদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন ঘটনা ঘটছে বহুবার। কিন্তু হোস্টেলে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই দূর-দূরান্তের হওয়ায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা এসব মাদক বিক্রেতাদের দাপট বেড়েই চলছে।

বহিরাগতদের অবস্থান ও মাদক বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে না পারলে সামনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন কলেজের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকাংশই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি পরিত্যক্ত হোস্টেল, অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস, কবি জীবনানন্দ দাশ হল, এ-ব্লক, সি-ব্লক ও বাকসু ভবনের আশপাশ যেন মাদকের হাট। এসব স্থানে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে বিক্রি হচ্ছে মাদক। ক্রেতা হিসেবে বহিরাগত মানুষের পাশাপাশি কলেজের মাদকাসক্ত কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রনেতাও রয়েছেন।

গত শুক্রবার রাতে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এক সময় এই কলেজটিতে পড়েছি, কাজের জন্য বরিশালে এসে প্রিয় ক্যাম্পাসটিতে ঘুরতে এলাম। কিন্তু গাঁজার গন্ধে হাঁটতে পারছিলাম না তাই চলে গেলাম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ঐতিহ্যবাহী কলেজটির যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎতো অন্ধকার।

কলেজে হাঁটতে আসা স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ইদানিং কলেজের ভিতরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও সেবনের চিত্র দেখা যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।

অনার্স চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, যারা কলেজের ভেতরে এসে মাদক বিক্রি করে ও সেবন করে আমরা তাদের কাছে অসহায়। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হয় এবং বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই চোখ বুজে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকে না।

কলেজটির সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি, তারা মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে দুই একজনকে ধরলেও বন্ধ হয় না মাদকের দৌরাত্ম্য। এটা আসলেই দুঃখজনক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেলার মাদক ব্যবসায়ী মেহেদী দীর্ঘদিন যাবত তার লোকজন দিয়ে কলেজে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মুন্না, সবুজ হালদার, রাব্বি মল্লিক, আকাশ বাহিনীর মাদক বাণিজ্যও অনেকটা প্রকাশ্য। অভিযোগ রয়েছে মাদক সেবনের জন্যই এসব বিক্রেতাদের শেল্টার দেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা। এদের অনেকে আবার বিসিসি মেয়র ও বরিশাল-৫ আসনের এমপির নাম ভাঙিয়ে চলে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই দিন দিন বাড়ছে মাদকের দৌরাত্ম্য। তাদের মতে, অভিযান চালিয়ে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কলেজের প্রশাসনিক ভূমিকা দরকার। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, বিএম কলেজ একটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে কলেজ প্রশাসন যদি শক্ত ভূমিকা নেয় তাহলে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে মাদক নির্মূল করতে সক্ষম হবো।

একই কথা বলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো. ছগির হোসেন। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পরে মাদক বিক্রেতারা। তাই কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার। তাহলে মাদক বিক্রেতাদের ধরতে সহজ হবে।

এ বিষয়ে বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাইউম হোসেন বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব পেলেও বিষয়টি আমার নলেজে এসেছে। অচিরেই বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও বিসিসি মেয়র এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ সভা করে মাদকের এই চক্রকে চিরতরে নির্মূল করবো। তবে এসব অসাধু ব্যক্তিরা মাঝেমধ্যে নিজেদেরকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জড়িয়ে ফেলার কারণে অসহায় হয়ে যান বলে জানান তিনি।

ওয়াইএ

Wordbridge School
Link copied!