• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

২০২৪ সালে চার মেধাবী শিক্ষার্থী হারিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


বরিশাল প্রতিনিধি  ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম
২০২৪ সালে চার মেধাবী শিক্ষার্থী হারিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা: ২০২৪ সাল শেষ হতে চলেছে, আর সবাই নতুন উদ্যমে ২০২৫ সালকে বরণ করে নিলেও, কিছু দুঃখজনক ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) হারিয়েছে চার মেধাবী শিক্ষার্থীকে, যারা আর ফিরে আসবেন না। এ বছর, চিরদিনের জন্য তারা পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।

২০২৪ সালের শেষের দিকে, ৩০ অক্টোবর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসের চাঁপায় তিনি নিহত হন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কয়েক দফায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন, যাতে এই দুর্ঘটনার কারণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গত ৬ সেপ্টেম্বর। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পনা দাস, যিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। জানা যায়, তিনি বাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং পরবর্তীতে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।

এছাড়া, ৯ জুন রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেফা নূর ইবাদি নিজ কক্ষে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন এবং বঙ্গমাতা হলের ১৪১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার মৃত্যু সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকের সাগরে ডুবিয়ে দেয়, কারণ তাঁর মত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী যে এমন একটি চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

এর আগে, ১৭ জানুয়ারি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বৃষ্টি সরকারও আত্মহত্যা করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন কর্ণকাঠির এমএম টাওয়ারে একটি মেসে থাকতেন এবং মেসের নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। তার মৃত্যুও বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষার্থীর মনে গভীর দুঃখ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইসা বলেন, ২০২৪ সালে আমরা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারিয়েছি, যা আমাদের জন্য গভীর শোকের বিষয়। মাইশা, অর্পনা, শেফা, এবং বৃষ্টি তাদের মৃত্যু আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আরও নজর দেওয়া, যেন ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন আরও বলেন, “এই অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবার ও সহপাঠীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী মূল্যবান, এবং তাদের সুস্থ মানসিকতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করব।

এই চার মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া ফেলেছে। এই ঘটনাগুলোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ শিক্ষার্থীরা শোকাহত, এবং সবার একটাই দাবি এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, যেন কোনো শিক্ষার্থী অকাল মৃত্যুর মুখে না পড়ে। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যু নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষানুরাগীরা আশা করছেন, আগামী বছর কোনো শিক্ষার্থীকে আর অকাল মৃত্যুতে শোকবিহীন হতে হবে না।

এআর

Wordbridge School
Link copied!