না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন আধিপত্যবাদবিরোধী প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ওসমান হাদির অনেক পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। অনেক নেটিজেন হাদির পোস্টগুলো রি-পোস্ট করছেন।
ওসমান হাদির মৃত্যুর দিনে তার দেওয়া একটি পোস্ট খুব বেশি ভাইরাল হচ্ছে। ওই পোস্টে হাদি লিখেছিলেন- ‘ মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়। আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে। যুগ হতে যুগান্তরে আজাদের সন্তানরা স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখবেই। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর হতে পৃথিবীতে পা রেখেছি।’
মহান বিপ্লবী হাদির কিছু কিছু ভিডিও ক্লিপসও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার মাধ্যমে এই শহীদকে স্মরণ করছেন সবাই। তার মধ্যে ‘ভাইয়া আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায় আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন’ শিরোনামে একটি ভিডিও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারের সময় কথাটি বলেছিলেন ওসমান হাদি। এ সময় তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
হাদি বলেছিলেন, ‘আমি নিজেকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছি। মন খারাপ হয়, আল্লাহ যদি আমাকে কোনো দিন নিয়েও যায় তো এই যে ছেলেমেয়েগুলা.... আমি আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি; আল্লাহ আমাকে একটা সন্তান দিসে। তিন মাস ওর বয়স। আমার বাচ্চাটারে তিন মাসে ত্রিশ মিনিটও আমি কোলে নিতে পারি নাই। আমার ওয়াইফ মাঝে মধ্যে মজা করে বাচ্চাকে বলে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। আমার এই প্রথম মনে হইলো আমি আমার ভাইয়াকে বলি, ভাইয়া আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায় আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন। কিন্তু এই কথাটা আমি আর বলতে পারি নাই।
আমার সারা জীবনের যেটুকু সততা সাহস লড়াই এটার দুনিয়ার সমস্ত শক্তি আমার আব্বা। আমি যদি কিছু হলেও করতে পারি সততার সাথে আল্লাহ যদি আমারে রহম করে তাহলে আমার ছেলে আমার পরিবার আমার ভাইবোন আমার ইনকিলাব মঞ্চের ভাইবোনগুলো এগুলো আল্লাহই দেখবে যেভাবে আল্লাহ এখন আমাদেরকে দেখতেছে সুতরাং কারো কাছে আর কোনো প্রত্যাশা নাই।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা হাদিকে গুলিবর্ষনকারী হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতাকে শনাক্ত করে। ওই আসামি ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওসমান হাদি। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের উদ্যোগে তাকে গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
এম
আপনার মতামত লিখুন :