• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
পদ্মা সেতুতে বাইক

নিয়ম ভেঙে এ কেমন সাংবাদিকতা?


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২০, ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম
নিয়ম ভেঙে এ কেমন সাংবাদিকতা?

ঢাকা: ঈদকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতুতে বাইক চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। কয়েকটি নির্দেশনা মেনে পরীক্ষামূলকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলে এ অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নিয়ম ভাঙলে আবারও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। 

তবে প্রথম দিনেই সরকারের নির্দেশনা অমান্য করেছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চড়ে লাইভ প্রতিবেদন করছিলেন তিনি। এসময় তার মাথায় কোনো হেলমেট ছিলো না। অথচ নির্দেশনায় বলা আছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুজনকেই মানসম্মত হেলমেট পরিধান করতে হবে। যদিও এক পর্যায়ে প্রতিবেদককে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা আসলে লাইভে আছি, লাইভে থাকার কারণে হেলমেট পরিধান করা সম্ভব হয়নি। আমাদের কাছে হেলমেট সংরক্ষিত আছে’। 

প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে লেন পরিবর্তন করতেও দেখা গেছে তাকে। এটিও নির্দেশনার স্পষ্ট বরখেলাপ।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আরটিভির ভিডিও প্রতিবেদনটি ৪লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। মন্তব্য জমা পড়েছে প্রায় ৫শ’র বেশি।

মন্তব্যে একজন লিখেছেন, ‘ব‍্যবস্থা নিলে সরকারের বাক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করছে
"রিপোর্টার সার্ভিস লেইনের বাহিরে গিয়ে বাইক চালাচ্ছেন এবং হ‍্যালমেট নাই"

আরেকজন লিখেছেন, ‘সাংঘাতিক সাহেবতো নিজেই আইন ভঙ্গ করে সার্ভিস লাইনের বাইরে বাইক চালাচ্ছে!!’

আরেকজনের মন্তব্য এমন, ‘এই সাংবাদিক কে ধরে আইনের আওতায় আনা দরকার। হেলমেট নাই, সার্ভিস লেনের বাইরে বাইক চালাচ্ছে’  

‘এখানেই দেখা যাচ্ছে বাইক ওভারটেকিং করছে এবং লাইনের বাইরে চলে আসছে’

‘এই সাংবাদিককে আইনের আওতায় আনা হোক!!-এধরণের মন্তব্যই বেশি। 

গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) একনেকের বৈঠকে পদ্মাসেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এরপর পদ্মা সেতুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মোটরসাইকেলে সেতু পার হতে অন্তত ৪টি নিয়ম মানতেই হবে চালকদের। এসব নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো—

১. সেতুর টোল প্রদান করা (১০০ টাকা, ওয়ান ওয়ে)
২. সেতুর নির্দিষ্ট লেনে (বাম পাশে সার্ভিস লেন) মোটরসাইকেল চালানো
৩. মোটরসাইকেলের গতি সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে রেখে চালানো
৪. মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুজনকেই মানসম্মত হেলমেট পরিধান করা

নির্দেশনা অমান্য করলে আইনের আওতায় আনা হবে। 

সাংবাদিকের নিয়ম ভাঙা নিয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন সোনালীনিউজকে বলেন, যদি কোনো রিপোর্টার নিয়ম অমান্য করে থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এধরণের কোনো ফুটেজ সামনে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। 

তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক যদি এধরণের কাজ করে থাকে তবে সেটা তার উচিৎ হয়নি। তিনি হয়তো না বুঝে করে থাকতে পারেন। তবে এটা করা তার কোনো ভাবেই ঠিক হয়নি। তাকে দেখে অন্যরাও নিয়ম অমান্য করতে উদ্ভুদ্ধ হবে। 

সচিব বলেন, শুক্রবার থেকে পদ্মা সেতুতে নির্দেশনা মানার বিষয়টি আরও কঠোর ভাবে মনিটরিং করা হবে। কোনো সাংবাদিকও যাতে নিয়ম ভাঙতে না পারে সেটিও নিশ্চিত করা হবে। 

এর আগে বুধবার সেতু সচিব সোনালীনিউজকে বলেছেন, টোল প্লাজা থেকেই মোটরসাইকেলের ওপর নজরদারি শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত চলবে। পুরো সেতু জুড়ে আনসার, পুলিশ টহল দিবে। সঙ্গে থাকবে ব্রিজ নিরাপত্তা বাহিনী। সেতুতে দাঁড়িয়ে কোনো ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে না। বাইক থামিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে না। তাই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ম্যাজিস্ট্রেট ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকবেন।  যে বা যারা চেষ্টা করবে এই নিয়ম ভাঙ্গতে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইনি শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। যদি সবাই ভালো ভাবে পদ্মাসেতু দিয়ে চলাচল করে তাহলে ভবিষ্যতেও পদ্মা সেতু মোটরসাইকেলের জন্য খোলা থাকবে। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিনে অন্তত ৪৫ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ছিল ২৭ হাজার। 

ওই দিন রাতে সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হন। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!