• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
অনুষ্ঠানে বক্তারা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে চাপে সাংবাদিকেরা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২০, ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে চাপে সাংবাদিকেরা

ঢাকা : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা পদক্ষেপে অবাধে তথ্যপ্রাপ্তি ও নিশ্চিন্তে তথ্য ব্যবহারের অবকাশ সংকুচিত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকেরা প্রবল চাপের মুখে আছেন। মুক্ত সমাজ না থাকলে মুক্ত সাংবাদিকতা হয় না।

শনিবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এবিএম মূসা-সেতারা মূসা স্মারক বক্তৃতা ও আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের সাংবাদিকতা জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এসব কথা বলেছেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মূসার ৯২তম জন্মদিনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন। এবার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা দেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, এবিএম মূসা, ফয়েজ আহমদ ও আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী—এই তিনজন সাংবাদিকের সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের কেউ কেউ তাঁর (বঙ্গবন্ধু) বা তাঁর মাধ্যমে সরকারের আনুকূল্যও পেয়েছেন। কিন্তু যখনই প্রয়োজন বোধ করেছেন, তখনই তাঁরা সরকারের সমালোচনায় পিছপা হননি। ফয়েজ আহমদ ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলন ও গণ-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ইতিহাসের এক বাঁকবদলে ভূমিকা রেখেছেন। একইভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে তিন জোটের বৈঠক আয়োজন ও রূপরেখা প্রণয়নেও তিনি মধ্যস্থতার কাজ করেছেন। গাফফার চৌধুরী দীর্ঘকাল প্রবাসজীবনে থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ভাষ্য রচনা করে গেছেন।

আবুল মোমেন বলেন, এবিএম মূসা বরাবর প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় সাংবাদিকের ভূমিকা পালনে সচেষ্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন, নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত তিয়াত্তরের নির্বাচনেও বিজয়ী হন। কিন্তু রাজনীতিতে থিতু হননি, ফিরেছেন সাংবাদিকতায়। তবে সব ক্ষেত্রে একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের কাছে প্রত্যাশিত স্বাধীন মতামত লালন করেছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আরও নানা পদক্ষেপে অবাধে তথ্যপ্রাপ্তি ও নিশ্চিন্তে তথ্য ব্যবহারের অবকাশ সংকুচিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আবুল মোমেন। লিখিত বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজনীতি জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং ক্ষমতা জন-অংশগ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন।

আবুল মোমেন আরও বলেন, গত এক যুগের ব্যাপক কর্মকাণ্ড, উৎসব-উদ্‌যাপনে গণমাধ্যমসহ নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। তার মধ্যে সংবাদকর্মীরা বাদ নেই। কিন্তু নীতি ও আদর্শ রক্ষা এবং সমাজে ন্যায়ের ভিত্তি রক্ষার জন্য, অন্তত স্বাধীন মতপ্রকাশে যাঁদের অগ্রভূমিকা নেওয়ার কথা, সেই শিক্ষকসমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর শোনা গেছে বা যাচ্ছে?

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক গোলাম রহমান। এবিএম মূসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মূসা ভাই নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হতেন। তিনি যতটা না বলতে পারতেন, তার চেয়ে লিখতেন অনেক বেশি।’

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করেন এবিএম মূসার একসময়ের সহকর্মী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘মূসা ভাই নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন।’

পরে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর হাতে আজীবন সম্মাননা তুলে দেন অধ্যাপক গোলাম রহমান ও মানবজমিনের সম্পাদক (মতিউর রহমান চৌধুরীর স্ত্রী) মাহবুবা চৌধুরী।

বক্তব্য দিতে গিয়ে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পুরস্কার পেয়ে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। একই সঙ্গে কিছুটা চিন্তিতও বটে। চিন্তিত এই কারণে যে আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। মূসা ভাই একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি সত্যের সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপস করেননি।’

মুক্ত সমাজ না থাকলে মুক্ত সাংবাদিকতা হয় না বলে মন্তব্য করেন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের হাত কেউ বেঁধে দেয় না, আমরাই বেঁধে ফেলি রাজনৈতিক কারণে। আসুন, আমরা রাজনীতি বাদ দিয়ে, রাজনীতিকে অন্য জায়গায় রেখে সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। তাহলেই সমাজ মুক্ত হবে এবং মুক্ত সাংবাদিকতা হবে।’

সম্মাননা পাওয়ায় মতিউর রহমান চৌধুরীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, মানবজমিন আকারে ট্যাবলয়েড, চরিত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র। মতিউর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকতায় অনেক বিশেষ খবর টেনে বের করে এনেছেন, নির্যাতিতও হয়েছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে সাংবাদিকেরা প্রবল চাপের মুখে আছেন উল্লেখ করে সমকাল সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মের সাংবাদিকদের পরম সৌভাগ্য যে আমরা মূসা ভাইয়ের মতো একজন সাংবাদিকের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম।’

অনুষ্ঠানে মানবজমিনের সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী বলেন, ‘মূসা ভাই আমার ভীষণ প্রিয় একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর কথা বলার মধ্যে একটা ভালো লাগা ছিল। এটা আমাকে ভীষণ টানত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম সাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাসান হাফিজ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং এর নানা কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেন এবিএম মূসার কনিষ্ঠ কন্যা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শারমিন মূসা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!