• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

শতভাগ পেনশন তোলা কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান যেভাবে


সোনালীনিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ৯, ২০২০, ০৩:৪৭ পিএম
শতভাগ পেনশন তোলা কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান যেভাবে

ঢাকা: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাইলে তার পেনশনের সব টাকা একবারে তুলে নিতে পারতেন। এ সুযোগে অনেকেই পেনশনের টাকা একবারে তুলে নিয়ে খরচ করে ফেলতেন। পরবর্তীকালে তাদের নিদারুণ কষ্টে দিন কাটত।

এজন্য বর্তমান সরকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শতভাগ পেনশন সমর্পণ করার এ নিয়মটি ২০১৭ সালের ৩০ জুন বাতিল করে। কিন্তু এই নিয়ম বাতিলের আগের দিন পর্যন্ত এক লাখ সাত হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের শতভাগ পেনশন তুলে নিয়েছিলেন।

বিধানমতে এর মধ্যে ২৯ হাজার ৩৬১ জন কর্মকর্তার অবসরজীবন ১৫ বছর পার হওয়ায় তারা ফের পেনশনে পুনর্বহাল হয়েছেন। আর বাকি ৭৮ হাজার ২৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসিক কোনো পেনশন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া (সমর্পণ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক ক্ষতির উদাহরণ দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শাহ আলম সিকদার তার ফেসবুকে পেইজে লিখেছেন, কোনো ব্যক্তি ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্য ১০ হাজার টাকা পেনশন সমর্পণ করে এককালীন ১০ দশ লাখ টাকা পেয়েছেন। তিনি যদি সমর্পণ না করতেন তাহলে মাসিক পেনশন বাবদ তিনি এখন ১৭ হাজার ২৫৬ টাকা পেতেন (৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট যোগ করে)। ৯৬ মাসে বা আট বছরে পেনশন বাবদ মোট ১২ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৬ টাকা পেতেন, যা প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি দশ লাখ টাকার চেয়ে দুই লাখ ৭৫ হাজার ১৫৬ টাকা বেশি। শতভাগ পেনশন সমর্পণ করায় এখন মাসিক কোনো পেনশন পাচ্ছেন না। এতে চরম কষ্ট ও যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। এমন হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অভাব-অনটনের মধ্যে রয়েছেন।

সূত্র বলছে, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে যে, সরকারি-বেসরকারি দেশের সব কর্মজীবীকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা। এ খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। গত ১৯ নভেম্বর শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত আবেদন জানান। এতে বলা হয়, অজ্ঞতাবশত পেনশন বাবদ প্রাপ্য ১০ হাজার ৭০০ টাকা সমর্পণ করার কারণে আট বছরে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ছয় লাখ ১৮ হাজার ৫২২ টাকা। কারণ, মাসিক পেনশন নিলে আট বছরে তিনি আরও ছয় লাখ ১৮ হাজার ৫২২ টাকা বেশি পেতেন। এভাবে প্রত্যেক পেনশন সমপর্ণকারী সরকারি চাকরিজীবীর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বৃদ্ধ বয়সে মাসিক কোনো পেনশন না পাওয়ায় অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছেন তারা। এজন্য রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অসহায় বৃদ্ধ চাকরিজীবীদের ১৫ বছরের স্থলে আট বছর পর পেনশন পুনর্বহালের আকুল আবেদন জানিয়েছেন। শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়ার পর ১৫ বছর পার হলে ওই অবসরভোগী ফের পেনশন পাওয়ার যোগ্য হন।

সূত্র জানায়, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের নিয়ম করে সরকার। তবে এ সুবিধা অবসরগ্রহণের ১৫ বছর অতিক্রান্তের পর পাচ্ছেন পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ৫৭ বছরে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরা ১৫ বছর পর ৭৩ বছর বয়সী হন। সে পর্যন্ত ক'জনই বা বেঁচে থাকেন? অবসরের পর অধিকাংশ চাকরিজীবী নানা জটিল, দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়বহুল অসুখ-বিসুখে ভোগেন। ফলে অবসরের ১৫ বছর পর পেনশন পুনর্বহালের সুফল খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তা ভোগ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত পেনশন পুনঃস্থাপনের সময়সীমা ১৫ বছরের স্থলে আট বছর করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য তারা শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেছেন। গ্রুপে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের দুঃখ-কষ্টের নানা কথা লিখছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য মাত্র ২২৬ কোটি ৭ লাখ অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন বলে এক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ফেসবুক গ্রুপে নুর আহমেদ নামে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিখেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য ১৫ বছরের স্থলে আট বছর করার যে দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে, তা যৌক্তিক। মুজিববর্ষের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী এই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, বর্তমানে অবসরগামীরা টাকায় ৮০ স্থলে ৯০, সমর্পণযোগ্য ২০০ স্থলে ২২০, ছুটির বেতন এক বছরের স্থলে দুই বছর ইত্যাদি সুবিধা পাচ্ছেন। আগে অবসর গ্রহণকারীদের এসব দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও তাদের পেনশন নতুন পেনশনারদের অনুরূপ হওয়া যুক্তিযুক্ত। এখানে সরকারের ব্যয় খুবই নগণ্য, যা মৃত্যুজনিত বিষয়ে ক্রমাগত কমতে থাকবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিচালক এ এস এম বজলুল হক বলেন, তিনি শতভাগ পেনশন সমর্পণ না করলে এখন প্রতি মাসে ২৩ হাজার ৮০ টাকা পেনশন পেতেন। সমর্পণ করায় সে টাকা এখন পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, পেনশন ফেরত পেলে আমার অবর্তমানে আমার স্ত্রী বা সন্তান মাসিক পেনশনের সুবিধা ভোগ করত। কিন্তু এ জন্য আমাকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তখন আমার বয়স হবে ৭৩ বছর। কিন্তু একজন মানুষ ৭৩ বছর অতিক্রম করার পর আর কয় বছর পেনশন ভোগ করার সুযোগ থাকে? অনেক পেনশনার ৬৫ বছরের আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তাই আট বছর পর ফেরত পেলে কিছুদিন অন্তত আর্থিক সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পেতাম।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, অবসরের পর দ্রুতই ফুরিয়ে যায় সম্পদ। বৃহত্তর পরিবারে উপেক্ষিত হন তারা। অথচ সে সময় তাদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়তে থাকে। এর সবকিছুর বিহিত সরকার করতে পারবে না। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তারা এখন চরম কষ্টে আছেন। তাদের ক্ষুদ্র পরিমাণ পেনশনটুকু ১৫ বছরের সময়সীমা শিথিল করে আট বছর করা হলে অনেকের চোখেই আনন্দাশ্রু আসবে। বৃদ্ধ বয়সে একটু সুখে থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া (সমর্পণ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্মীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানরাও (যদি থাকে) পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সময়সীমা শিথিলের বিষয়টি নিয়েও সরকার আলোচনা করবে।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!