• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতের তিনশতাধিক অর্থদাতা চিহ্নিত


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৮, ২০২১, ০১:৫৪ এএম
হেফাজতের তিনশতাধিক অর্থদাতা চিহ্নিত

ঢাকা : হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আর মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতেই সাবেক আমির আল্লামা শফীকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবসহ কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আল্লামা শফীকে সরিয়ে বাবুনগরীকে আমির করার পরিকল্পনা হয়।

২৬ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের সংশ্লিষ্ট নেতাদের পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রোববার (২৫ এপ্রিল) হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করে অন্য দুই মামলায় আরো ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামের সংগঠনের আদলে হেফাজতে ইসলাম পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এ দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

পুলিশ আরো জানায়, গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) গ্রেপ্তার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। হেফাজতে ইসলামের অধিকাংশ নেতাই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত। মাদরাসার শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকার উৎখাত করে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হলেও সেসময় তার মোবাইল ফোন জব্দ করা যায়নি। পুলিশ শুরু থেকেই বলছে, মামুনুলের ফোনের ভেতরে অনেক ক্লু লুকিয়ে রয়েছে। সেটি উদ্ধার করা গেলে অনেক নতুন তথ্য সামনে আসবে। শেষ পর্যন্ত তার লুকানো ফোনটি উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। মোহাম্মদপুরের মাদরাসার একটি কক্ষ থেকে সেটি উদ্ধারের পর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে তার মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটিং লিস্ট থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে তার কাছে লাখ লাখ টাকা আসার তথ্য মিলেছে।

পুলিশ বলছে, মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে। ভারতের বাবরি মসজিদ, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষা ও হেফাজতে ইসলামের নাম করে মামুনুল মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন। সেসব টাকা বিভিন্ন উগ্রবাদী নাশকতামূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকের হিসাব নম্বরে এসব অর্থ তার কাছে পৌঁছত। ঢাকায় ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণ করেছেন মামুনুল। এই মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্তান থেকে টাকা আনার প্রমাণও মিলেছে। মামুনুলের মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য যাচাই করে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।’ শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীর মতো মামুনুলের ফোনেও চমকপ্রদ কিছু পাওয়ার আভাস দিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার ফোনটির খোঁজ পাওয়া যায়। মাদরাসা থেকে ফোনটি উদ্ধারের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক সোর্স থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহের তথ্য ফোন থেকেই আমরা পেয়েছি। সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংক তার অর্থের বিষয়গুলো আরো বিশদভাবে দেখবে।’

নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টকাণ্ডের পর একের পর এক ফোনালাপ ফাঁসের মাধ্যমে মামুনুলের আসল চরিত্র উন্মোচিত হয়। সেসময় মামুনুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের নীতিনির্ধারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার মোবাইল ফোনটি তখন জব্দ করা গেলে আরো অনেক তথ্য সামনে আসত বলে মনে করেন তারা।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও চুরির মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত নাশকতার দুই মামলায় মামুনুলের আরো সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে তার জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলা এবং চলতি বছরের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামুনুলের ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই মামলায় হাবিব ও কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদের রিমান্ড আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত হাবিব ও মামুনুলের সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন। জালাল উদ্দিন আহমেদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল পল্টন থানায় আরেকটি মামলায় জুনায়েদ আল হাবিবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ডিবির সূত্র জানায়, মামুনুলের সাথে জামায়াত কানেকশন পাওয়া গেছে। এ কারণে নাশকতায় তার উদ্দেশ্য এবং এর পেছনে কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামুনুল ভারতবিরোধী মতাদর্শীর লোকজন এবং সরকারবিরোধী দলের লোকজনকে একসঙ্গে করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এ জন্য ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনে মোদি জড়িত বলে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই ইস্যুতে সারা দেশে তিনি কিছু রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে ‘বড় মুভমেন্ট’ করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্য দল ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে ধারণা ছিল তাদের। হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার কিছুই হবে না বলে বিশ্বাস ছিল মামুনুলের। এ কারণে কৌশলে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে বিরোধিতা শুরু করেন। পরে মোদিবিরোধী স্লোগান তোলেন। মামুনুলের নাশকতার পরিকল্পনার পাশাপাশি তার আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তার নাশকতায় ব্যবহূত টাকা কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গেছে তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!