• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
সরকারি কর্মকর্তাদের মাদক পরীক্ষা

পজিটিভ হলে কঠোর ব্যবস্থা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১, ০৪:৪৯ পিএম
পজিটিভ হলে কঠোর ব্যবস্থা

ঢাকা : বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাদক পরীক্ষার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে চাকরিরত মাদকাসক্তরা চিহ্নিত হবেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই মাদক গ্রহণের অভিযোগ পাই। সেজন্য প্রতি বছর একবার মাদক পরীক্ষার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে মাদকাসক্তরা ধরা খাবেন।  পরীক্ষায় যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে অন্যরাও সতর্ক হবেন।

গত ১৭ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মাদক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাদক পরীক্ষার আওতায় আসবেন। যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন : বয়স ছাড়ের সুফল পাবে কি সরকারি চাকরি প্রার্থীরা?

পরিকল্পনাটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয় করছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাদক পরীক্ষার জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরিতে কর্মরত অনেকের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ আসে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকার বছরে একবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের  মাদক পরীক্ষার পরিকল্পনা নিয়েছে। চূড়ান্ত ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) বিধিমালাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে।

আরও পড়ুন : ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীদের পদ-পদবি পরিবর্তনে আল্টিমেটাম

এবিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত মাদক পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধিমালায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিধিমালাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত হলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এটি কীভাবে বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা দেখা (পর্যালোচনা) হচ্ছে। যেভাবেই হোক, বিধিমালাতে আমরা বিষয়টি নিয়ে আসব।

তিনি বলেন, চাকরির বিধিতে এটি (মাদক গ্রহণ) অনৈতিক। এটি অসদাচরণের শামিল। আপনি অ্যালকোহল বা এ জাতীয় জিনিস বিনা অনুমতিতে গ্রহণ করতে পারবেন না, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এটি স্পষ্ট বলা আছে। তাই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এ মাদক পরীক্ষার জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ওই আইনের আলোকে ‘ডোপ টেস্ট বিধিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করছে সরকার। যা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ অর্থ হচ্ছে, মানবদেহে জৈবিক নমুনা পরীক্ষা করে মাদকদ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া। ‘নেগেটিভ’ অর্থ, মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। খসড়া অনুযায়ী, মাদক পরীক্ষার প্রয়োজন দেখা দিলে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর জৈব নমুনা হিসেবে মূত্র, রক্ত, ঘাম, নখ, প্রশ্বাসের বাতাস, মুখের লালা ও মানবদেহের যে কোনো অঙ্গ বা অংশবিশেষ বা দেহের তরল সংগ্রহ করা হবে। টেস্টের কাজে ব্যবহারের পর নমুনার অবশিষ্টাংশ অন্তত ছয় মাস সংরক্ষণ করতে হবে।

আরও পড়ুন : ‘ঘুষ খেলে নামাজ হবে না, আয়নার সামনে দাঁড়ান’

খসড়া বিধিমালায় আরো বলা হয়, ফলাফল পজিটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত বলে ঘোষণা করা যাবে। সেক্ষেত্রে মাদক সেবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ধারায়’ শাস্তি দেওয়া হবে।

জানা গেছে,  প্রতিদিন ১০০ ব্যক্তির মাদক পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। বছরে একবার সরকারি চাকরিজীবীদের ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে অধিদপ্তরের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে।

এবিষয়ে আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, এটি খুব বড় ইস্যু নয়। কারণ, লোকবল বাড়িয়ে দিলেই সক্ষমতা বেড়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!