• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ মাসে হেফাজতের ৪ শীর্ষ নেতার বিদায়


নিজস্ব প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৩:৪৭ পিএম
১৪ মাসে হেফাজতের ৪ শীর্ষ নেতার বিদায়

হেফাজতের শীর্ষ ৪ নেতা

ঢাকা : ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মাধ্যমে দেশে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজনীতিতে আলোচনায় আসে। এ সংগঠনটি গেল ১৪ মাসের শীর্ষ চার নেতাকে হারিয়েছে। এরমধ্যে সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মামলাও হয়েছে।     

গেল ১৪ মাসে হেফাজতের শীর্ষ যে চার নেতার মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফী, সাবেক মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী। 

শাহ আহমদ শফী : বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ, অসুস্থ ও মৃত্যু

শাহ আহমদ শফী মারা যান ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। আহমদ শফী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহমদ শফীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। 

দুই ছেলে আর তিন মেয়ের জনক আহমদ শফী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। আহমদ শফী যখন মারা যান তখন হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভের মুখে মাদরাসার পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনার কিছুক্ষণ পরই মারা যান তিনি। 

আহমদ শফীর মৃত্যুর পর পরিবার অভিযোগ তোলে, পদ ছাড়ার দিন হট্টগোলের সময় শাহ আহমদ শফীকে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে হত্যার অভিযোগে নালিশি মামলা করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। আগামী বছরের ২ মার্চ এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রযেছে। 

মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার এক মাসের মাথায় মৃত্যু নূর হোসাইন কাসেমীর : ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মারা যান সাবেক মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী। ফুসফুসের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

করোনা মহামারির মধ্যে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় ১ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল তার। 

নূর হোসাইন কাসেমী : অসুস্থ হওয়ার মাত্র দু’সপ্তাহ আগে হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত হন নূর হোসাইন কাসেমী।  তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি এই সংগঠনের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আমির ছিলেন। 

এছাড়া বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন।

হেফাজতে ইসলামের ভাস্কর্যবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছিলেন নূর হোসাইন কাসেমী।

এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় আমিরের মৃত্যু : হেফাজতে  ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে এক বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয় তার। 

জুনায়েদ বাবুনগরী : চলতি বছরের ১৯ আগস্ট মৃত্যু হয় হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

জুনেই মহাসচিব নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম জিহাদী : চলতি বছরের জুনে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং নুরুল ইসলাম জেহাদিকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলামের ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।  

নুরুল ইসলাম জিহাদী : গেল শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সোমবার দুপুরে মারা যান তিনি।  

যেভাবে এলো হেফাজত : চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মাধ্যমে। ওই সমাবেশের আগে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ঘরানার বাইরে হেফাজতের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা ছিল না অনেকের। 

ওই সমাবেশের পর থেকে নিয়মিত আলোচনায় রয়েছে হেফাজতের নাম। সংগঠনটির ঘোষণা করা ১৩ দফা কর্মসূচিও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। 

এসব দাবির মধ্যে ছিল ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন করা, নারীদের পোশাকে বিশেষ করে হিজাব উদ্বুদ্ধ করা, নারী নীতি ও শিক্ষা নীতির কথিত ইসলাম বিরোধী ধারাগুলো বাদ দেয়া, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, ভাস্কর্য বা মঙ্গল প্রদীপের মতো বিষয়গুলোর বিরোধিতা, নাটক সিনেমায় ধর্মীয় লেবাসের লোকজনের নেতিবাচক চরিত্র বন্ধ কিংবা কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবির মতো বিষয়গুলো।

হেফাজতে ইসলামের আগে ১৯৯৪ সালে তাসলিমা নাসরিন ইস্যুতে বড় ভাবে সংগঠিত হয়ে ব্যাপক শক্তি প্রদর্শন করলেও তা পরে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠনগুলো। এছাড়া লেখক সালমান রুশদীর লেখায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এবং পরে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় দেশজুড়ে সক্রিয় হয়েছিল সংগঠনগুলো। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!