• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভোজ্যতেলের জন্য দিশেহারা নিম্নবিত্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৮, ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম
ভোজ্যতেলের জন্য দিশেহারা নিম্নবিত্ত

ঢাকা : নিত্যপণ্যের বাজারে সয়াবিন তেলে আগুন লেগেছে। সবার দৃষ্টি এখন টিসিবির ট্রাকের দিকে। অথচ অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এলাকার কিছু লোক নিয়ে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাকের তেল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও নিম্নআয়ের মানুষগুলো পাচ্ছে না তেল। এতে চরম হতাশা ও কষ্ট নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে খালি হাতে।

সরকারি বরাদ্দকৃত টিসিবির ট্রাকে তেলের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হাহাকার করতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে দুই লিটারের বোতল ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ টিসিবির ট্রাকে মাত্র ২২০ টাকায় পাওয়া যায় দুই লিটার। কিন্তু অবৈধভাবে প্রভাবখাটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় এই লাইন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে ভুক্তভোগীদের।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম চড়া। টিসিবির ট্রাক সেলে নির্ভর হয়ে যাচ্ছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। সেখানেও তাদের ভোগান্তি চরমে। সকাল থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। দুপুরের দিকে পণ্য প্রায় শেষ হয়ে গেলে টাকা হাতে লাইনের শেষে দাঁড়ানো মানুষের শুরু হয় হুড়োহুড়ি।

স্বামী রিকশাচালক, তিন সন্তানসহ খাওনেওয়ালা মোট পাঁচজন। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ও পেঁয়াজসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম। একজনের রোজগারে পাঁচজনের সংসার চালানোর দায় হয়ে পড়েছে। এ কারণে টিসিবি থেকে অপেক্ষাকৃত সস্তা দামে তেল ও চিনে নিতে এসেছি। গতকাল সোমবার মধ্যদুপুরে রাজধানীর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের অদূরে সকাল থেকে টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষমাণ রিকশাচালকের স্ত্রী নিলুফা বেগম গণমাধ্যমকে ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তার সংসারে পড়েছে বলে জানান তিনি।

সকাল সাতটা থেকে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ হোসেন আলী। তিনি আবাসিক ভবনের নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন।

তিনি জানান, মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পান। স্ত্রী-সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকে তাই নিজে রান্না করে খান। টিসিবির পণ্য কেনার জন্য আজ ছুটি নিয়েছেন। সকাল থেকে অপেক্ষা করলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বাইরে ট্রাক না আসায় হতাশ তিনি।

শুধু নিলুফা বেগম ও বৃদ্ধ হোসেন আলী নন, তাদের মতো আরো অনেকেই টিসিবির ট্রাক আসার অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে দেখা যায়।

রসুলবাগের বাসিন্দা মধ্যবয়সী জাহানারা বেগম জানান, তিনি টিসিবির পণ্য কেনার জন্য নিয়মিত এলেও প্রায় দিনই কয়েকশ মানুষের পেছনে পড়ে পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফেরেন বলে জানান।

তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের এই উদ্যোগ ভালো হলেও অধিকাংশ সময় স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা লাইন ছাড়াই পণ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতি চালু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

বেশ কয়েকদিন টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকার পর রোববার ৬ মার্চ থেকে নবম দফায় টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি হলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম বলে অপেক্ষমাণ লোকজন জানান।

ওএমএসের পণ্য বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন ৬০০ জনকে চাল ও ৩৩৩ জনের কাছে আটা বিক্রি করে থাকেন। জনপ্রতি ৫ কেজি চাল ও তিন কেজি করে আটা দেওয়া হয়।

সকাল থেকে দুপুর অবধি দাঁড়িয়ে থেকেও টিসিবির টাকে দেখা না পেয়ে রাস্তার অপর প্রান্তে লাইনে দাঁড়িয়ে আরো অনেককে ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে দেখা যায়। কেউ টিপসই দিয়ে আবার কেউ বা স্বাক্ষর করে চাল-আটা কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

গতকাল দুপুরের দিকে রাজধানীর শাজাহানপুর আমতলায় টিসিবির ট্রাকের সামনেও দেখা গেছে বিপুল মানুষের ভিড়। সকাল থেকেই সেখানে অসংখ্য মানুষকে অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। একটু দেরিতে ট্রাক পৌঁছলেও পণ্য বিক্রি হতে সময় লেগেছে অল্প সময়। ডিলারের ট্রাক দেখা মাত্রই বেধে যায় হুড়োহুড়ি। লাইন ভেঙে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ভিড় ঠেলে পণ্য পেতে হাতাহাতিও করতে দেখা গেছে অনেককে। এদিকে কাকে রেখে কাকে পণ্য দেবেন তাই নিয়ে হিমশিম খেতে হয় পণ্য বিক্রয়কারীদের।

এখানকার ডিলার ট্রাকের এক বিক্রয়কর্মী মো. জুয়েল বলেন, সবার পণ্য লাগবে। কাকে রেখে কাকে পণ্য দেই, কাকে নিরাশ করব বুঝে উঠি না। লাইন বজায় রাখাটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। পণ্য পেতে ট্রাকের ওপরেও উঠে পড়ছে কেউ কেউ। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিপদে পড়ে যাই আমরা।

তিনি আরো বলেন, বাজারে পণ্যের দাম লাগাতার বাড়তে থাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে মানুষের ভিড় অনেক হারে বাড়ছে। অথচ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম। ট্রাক নিয়ে আসার পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তেল, ডাল ও চিনির চাহিদাটাই সবচেয়ে বেশি।

দীর্ঘসময় চেষ্টার পর পণ্য পেয়েছেন আলেয়া আক্তার। তিনি বলেন, আগে গরিবরা ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়াইতো। করোনার পর থেইকা সাহেবরাও লাইনে দাঁড়াইতাছে। এহনতো তাগো ভিড়ও বাড়ছে; কিন্তু যেটুকু সদায়পাতি দেয় তাতে এত মানুষের অয় না। আইজ কপাল ভালো সদায় পাইছি। অনেক দিন আছে সারা দিন খাড়াইয়াও সদায় পাই না।

বাজার নিয়ন্ত্রণে ভর্তুকি মূল্যে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করছে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বর্তমানে বরাদ্দ বাড়িয়ে ট্রাকপ্রতি ৭০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি মসুর ডাল, ১০০ থেকে ৫০০ কেজি চিনি এবং ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে সংস্থাটি। ট্রাক থেকে ক্রেতাপ্রতি সর্বোচ্চ চার লিটার তেল, দুই কেজি করে চিনি ও ডাল এবং পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, বিপুল মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্যের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ৪০০ থেকে ৫০০টি ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পণ্য বরাদ্দ দিচ্ছি। অল্প দামে পণ্য কিনতে পারায় অল্পসংখ্যক হলেও অনেক মানুষ উপকৃত হবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!