• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২০ টাকা খরচে আনন্দের কান্না


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৬, ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম
১২০ টাকা খরচে আনন্দের কান্না

ঢাকা: মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন ১৯৫ প্রার্থী। আনন্দে কেঁদেছেন অনেকেই। 

বুধবার (১৫ মার্চ) রাতের শেষ ভাগে এসে ময়মনসিংহের পুলিশ লাইন্স চত্বরে আয়োজিত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। চাকরি পাওয়ার আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়েছেন অনেক প্রার্থী, তাদের বাবা-মাও খুশিতে কেঁদেছেন।

নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তানজিনা আক্তার মিম। তিনি ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালি বয়রা বেপারী পাড়া গ্রামের সিএনজিচালক বাদল মিয়ার মেয়ে। আজ তাদের খুশির দিন। টাকা কিংবা তদবির ছাড়াই মেয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছে। বাদল মিয়া বলেন, শুনেছি ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। এটা আজ মিথ্যা প্রমাণ হলো। আমার মতো গরিব মানুষের মেয়ে মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশে চাকরি পেল।

জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের বর্গাচাষি তাজুল ইসলামের ছেলে তারিকুল ইসলাম সাব্বির। তাজুলের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এক ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাব্বিরকে ঘিরেই পরিবারটির সকল স্বপ্ন। বুধবারের প্রকাশিত ফলাফলে সাব্বিরও নির্বাচিত হয়েছে। সাব্বির পুলিশ হচ্ছে এই খবরে আনন্দ বইছে পরিবারে।

শুধু মাহি, মিম ও সাব্বির নয়, তাদের মতো অনেক প্রান্তিক পরিবারের সদস্যই নিজের মেধা ও যোগ্যতা বলে কোনো ধরনের অর্থ ও তদবির ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। 

জেলা পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ জেলার জন্য নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ ছিল ১৯৫টি। পুরুষ ১৬৬ জন এবং নারী ২৯ জন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত পালন করে আবেদন জমা হয় ১০ হাজার ৮০ জন প্রার্থীর। যাচাই-বাছাই শেষে ৬ হাজার ৬০৬ জন প্রার্থীর আবেদন গৃহীত হয়। বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে ১৯৫ জন পুলিশ পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে পুরুষ সাধারণ কোটা ১০৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩৯ জন, পুলিশ পোষ্য কোটা ১৭ জন, আনসার ও ভিডিপি কোটা ১ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা ৪ জন এবং এতিম কোটা ২ জন নির্বাচিত হন।

নির্বাচিত ১৯৫ জনের মধ্যে ৬৮ জন প্রার্থীর পরিবার চরমভাবে অসহায় ও দারিদ্র্য সীমার নিচে জীবন-যাপন করেন। এর মধ্যে ১২ জন প্রার্থীর বাবা অটোরিকশা ও সিএনজি চালক। কৃষক, দিনমজুর, বাস্তুচ্যূত পরিবারের প্রার্থীরা তাদের মেধা যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে টিআরসি পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ১৯ জন প্রার্থী জিপিএ ৫ প্রাপ্ত পাওয়া যায়।

এতিম কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ২ জন ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবার (বালক) এ ছোটবেলা থেকে অবস্থান করে পড়াশোনা করেন। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত নারী প্রার্থী ২৯ জনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ২৪ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ২ জন।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, কোনো দালাল চক্র যাতে পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে টাকা আত্মসাৎ করতে না পারে সেই বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে অনুরোধ করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার চালানো হয় শুরু থেকে। জনসচেতনতার কারণেই সব কাজ সহজ হয়েছে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিত্তে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯৫ জন পুলিশ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!