• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ব্রহ্মা চেলানির নিবন্ধ- নিক্কি এশিয়া

বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ মার্কিন প্রশাসনের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ১৮, ২০২৩, ০১:২১ পিএম
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ মার্কিন প্রশাসনের

ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন বাংলদেশে সঠিক গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে সুস্থ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তার মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকির কথা বলছে অন্যদিকে পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক শাসন, গুমের ঘটনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন চলমান থাকলেও সে বিষয়ে পালন করছে সম্পুর্ণ নীরবতা।

তবে কি এসব রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র?

এই প্রশ্নের সংক্ষেপ উত্তর হলো- যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অধিকার সুসংহতকরণের দীর্ঘ ইতিহাস বলে এটি তারা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা ও পরিস্থিতি এ ক্ষেত্রে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আগেও গণতন্ত্র সুসংহতের কথা বলে এমন বহু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন নীতি নির্ধারকরা।

গণতন্ত্রের স্বার্থের কথা বলে এর আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যদিওবা সেটিও যে খুব কাজে দিয়েছিল তা বলা যায় না।

উপোরল্লিখিত কথাগুলো ভারতের নিউ দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এমিরেটাস অধ্যাপক ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপদেষ্টা ব্রহ্মা চেলানি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন।

নিবন্ধটি টোকিওভিত্তিক বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ার ইংরেজি ভার্সনে প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক ব্রহ্মা চেলানি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এই ভিসানীতির মধ্য দিয়ে সম্ভবত দুটি জায়গাকে  গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চেয়েছে। দেশটির রাজনীতিবিদদের আত্মীয়পরিজনের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাস করেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলেই মার্কিন গ্রিন কার্ডধারী। আর তাছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানির বিরাট এক অংশ পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়। আর এতে করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষস্থানীয় একটি গন্তব্য।’

এর আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। আর যারা কিনা সুস্থ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দিবে তাদের বিরুদ্ধেই এ ভিসা নীতি।

ওই নিবন্ধে ব্রহ্মা চেলানি লিখেন, ‘ শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকেই একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যদিও বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে একটি বিরূপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। কিন্তু টানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পাকিস্তান প্রায় দেওলিয়া হওয়ার পথে। অথচ বাংলাদেশকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানে আয়োজিত ২০২১ এবং এ বছরের শুরুতে ডেমোক্রেসি সম্মেলনের বাইরে রাখা হয়েছে। যেখানে কিনা পাকিস্তানকে দু’বারই আমন্ত্রণ জানানো হলো, যদিও তারা তাতে যায়নি।’

বাংলাদেশর ঈর্ষনীয় সফলতার পরও বাইডেন প্রশাসন মুহুর্মুহ বাংলাদেশ গণতন্ত্র চর্চায় পিছিয়ে রয়েছে বলে সমালোচনা করে যাচ্ছে।

এর আগে ২০২১ সালে দেশটির এলিট বাহিনী র‍্যাব ও বাহিনীর ছয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তার  ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন প্রশাসন। তাদের অভিযোগ, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বাহিনীটি।

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দেশটির অন্যতম বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি ও এর জোটভূক্ত ইসলামিক দলগুলোর ওপর পুলিশের নিপীড়নের বিষয়ে তদন্তের দাবীও জানিয়েছিলেন।

আর অতি সম্প্রতি ব্লিনকেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আবদুল মোমেনকে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও সুশীল সমাজের বাক স্বাধীনতার বিষয়ে সরকারের ভুমিকার বিষয়ে নজর রাখছে বলেও জানান।  

এদিকে মার্কিন এই ভিসা নীতি মূলত হাসিনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই আরোপ হয়েছে এ ব্যাপারে হয়ত সন্দেহ নেই। কারণ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সরকারের গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি এর আওতায় থাকায় তা প্রমাণ পায়। তবে নতুন ভিসা নীতির আওতায় অবশ্য বিরোধী দলের নেতাদের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হলে তা বেইজিং নাকচ করে দেয়। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি’র ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এর কারণ বলে উল্লেখ করে বেইজিং। মার্চে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আরও পাঁচ বছর আগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে বেলারুশ ও কিউবা নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে কিন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফলতা পায়নি। এমকি দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতেও সক্ষম হয়নি মার্কিন প্রশাসন।

নিবন্ধে  তিনি আরও বলেন,  ‘ঢাকার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কড়াকড়ির তেমন কোনো অর্থ বা যৌক্তিকতা মিলছে না। এশিয়ার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তাতে শেখ হাসিনার সরকার বরং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। অথচ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করতে গত মাসে শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন সেসময় বাইডেন প্রশাসনের একজনও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

আর এদিকে সিঙ্গাপুরে চলতি মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বললেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ভ্রু কুচকানি বা অঙ্গুলি হেলনের বিপরীতে কিছু করবে না। কিন্তু ঠিকই বাংলাদেশে এমনটি করা হচ্ছে, আর সে পথেই আগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর এসব থেকে বুঝা যায়, বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র এখন যা কিছু করছে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের চেয়ে ইসলামাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা চলাকালে যে অবস্থান নিয়েছিল ঠিক সেই দু:সহ স্মৃতির কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

তাহলে প্রশ্ন- এত কিছুর পর ওয়াশিংটন আর কি করতে পারে বা আসলেই তাদের চাওয়াটা কী?

সূত্র: নিক্কি এশিয়া, টোকিও


সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!