ঢাকা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কর্মমুখী সমাজ থেকে উদ্যোক্তামুখী সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে তরুণদের বিকল্প নেই।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তরুণরাই নিত্যনতুন আইডিয়া ও প্রযুক্তি সমাজের সামনে উপস্থাপন করবে। যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই তরুণদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
আসিয়ানভুক্ত অঞ্চলের ভবিষ্যত গড়তে অনুসরণ থামিয়ে নতুন কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সামাজিক উদ্যোক্তা কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতিকে নির্মাণ করতে হবে। আসিয়ান ফ্রেমওয়ার্কেও তার উল্লেখ থাকতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। ভিন্ন একটি সমাজ গড়তে সামাজিক ব্যবসা তহবিল ব্যবহার করতে হবে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ক্রিস্টিন লাগার্ডের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা : শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বুধবার ক্রিস্টিন লাগার্ডের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রধান উপদেষ্টার। সে সময় তিনি ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে এ বিষয়ে সহায়তা চান বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ক্রিস্টিন লাগার্ডেকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ ধনকুবেররা’ কেবল দেশের ব্যাংক খাত থেকেই ‘প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার’ পাচার করেছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ‘প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে’ দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
ইউনূস বলেন, এটা ছিল বিশাল এক ডাকাতি।
কীভাবে ওই ‘ডাকাতি’ হয়েছে, সেই বিবরণ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে এসব ধনকুবেররা ব্যাংক দখল করে নেয় এবং পরে সেই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তা আর পরিশোধ করেনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সহযোগিতা করার কথা বলেন লাগার্ড। তিনি পরামর্শ দেন, বাংলাদেশ এই অর্থ পুনরুদ্ধার ও দেশে ফেরানোর জন্য আইএমএফের সাহায্য নিতে পারে।
বৈঠকে জুলাই বিপ্লব এবং বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। লাগার্ড বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহযোগিতার কথাও বলেন।
অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনিভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিনিয়োগে বিদেশিদের আহ্বান জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা : ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন উপযুক্ত স্থান-এই বার্তা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরবেন।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে অধ্যাপক ইউনূস বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সেখানে সম্মেলনের ফাঁকে আজ তিনি ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা, বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড, বিশ্বের বৃহৎ শিপিং কোম্পানি এপি মুলার মার্কসসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করবেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে বলেন, ‘ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা, বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড, বিশ্বের বৃহৎ শিপিং কোম্পানি এপি মুলার মার্কসসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি।’
প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি দেশটি এখন গণতন্ত্র রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত- এই বার্তা অধ্যাপক ইউনূস বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে চান।
শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগ এলে তারা উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ তৈরি করবে, যা এই মুহূর্তে আমাদের দেশের জন্য খুব দরকার।
প্রেস সচিব জানান, গতকাল দাভোসে প্রধান উপদেষ্টা ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবে তরুণরা কীভাবে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিল- তা তুলে ধরেন। প্রতিটি গ্রাফিতি দেখে বোঝা যায়- কীভাবে আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিল তরুণরা- তাও তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ ছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে সহায়তা চান।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা যায়- সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চলতি বছর বাংলাদেশ একটি বড় বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে ১৭০টির মতো দেশ অংশগ্রহণ করবে। এই সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে তাঁর সহায়তা চাওয়ার পর গ্র্যান্ডি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এই সম্মেলন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গা সঙ্কট যে বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট সেটা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। ড. ইউনূস চান রোহিঙ্গা সঙ্কটকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরতে। সেক্ষেত্রে তিনি ইউএনএইচসিআরের সহায়তা চেয়েছেন।
এমটিআই