• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০৪:১৫ পিএম
আ.লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না

রাজশাহী: আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, কখনো পিছু হটে না। আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ পায়।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বক্তব্যে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করে আবারও সরকার গঠন করতে রাজশাহীবাসীর কাছে ভোট চান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট হবে এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরেতে। নৌকায় ভোট দেবেন কি না ওয়াদা চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদশে যেন করতে পারি, আপনার এ জন্য নৌকায় ভোট দেবেন।’

এ সময় জনসভাস্থলে উপস্থিত জনতা প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে হাত তুলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউ এদেশের মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগ আজ দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। বিএনপি বলে ক্ষমতা গেলে পালানোর সুযোগ পাবেন না। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। যেই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত নেতা আজ বড় বড় কথা বলে। বিএনপি-জামায়াতের পাচার হওয়া ৪০ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। আমি জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র রুখে শুধু দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসি।

সরকারপ্রধান বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার।

জেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সকালে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে বেলা সোয়া ৩টার দিকে জনসভাস্থল ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে উঠে আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। পরে তিনি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন ও প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৩৭৬ কোটি ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নির্মাণ প্রকল্প, শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ প্রকল্প, মোহনপুর রেলক্রসিংয়ের ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প, ভদ্রা রেল ক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক ও ডিভাইডার নির্মাণ প্রকল্প, বন্ধ গেট থেকে সিটি হাট পর্যন্ত চার লেন সড়ক ও ডিভাইডার নির্মাণ প্রকল্প।

আরও রয়েছে- রাশিয়া হাইটেক পার্ক থেকে কোর্ট শহরতলি ক্লাব পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক (জেড-৬০০৪) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স নির্মাণ প্রকল্প ও রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প।

আরও আছে- ৪০ উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৬৪ জেলায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, পরিচালন বাজেটের আওতায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত ও পুনর্বাসন খাত প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, বোয়ালিয়ায় ছয়তলা ভিত্তি বিশিষ্ট দ্বিতল ছাত্রীনিবাস নির্মাণ প্রকল্প।

এ ছাড়া রয়েছে- ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের আওতায় চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও রাজশাহীর নতুন সিভিল সার্জন অফিস ভবন প্রকল্প।

রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাঁ তীরের স্থাপনাসমূহ নদীভাঙন থেকে রক্ষার্থে নদীতীর রক্ষা প্রকল্প, রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ভূমি পুনরুদ্ধার ও নদীর নাব্য বৃদ্ধির জন্য পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্প, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, তানোর উপজেলাধীন তানোর- আমনুরা ভায়া মুন্ডুমালা হাট চেইনেজ ও পবা উপজেলাধীন মল্লিকপুর বাইপাস (কুখন্ডি বাজার) আরএইচডি-রামচন্দ্রপুর জিসি আরএইচডি চেইনেজ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, বাগমারায় ভবানীগঞ্জ-আহসানগঞ্জ (বাগমারা অংশ) চেইনেজ ও ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট (বাগমারা অংশ) চেইনেজ এবং ভবানীগঞ্জ - (মাথাভাঙা) হাটগাঙ্গোপাড়া চেইনেজ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহীর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৪) আওতায় পিটিআইয়ের তিন তলা বহুমুখী অডিটোরিয়াম নির্মাণ প্রকল্প, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও নির্মাণ প্রকল্প রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ, রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি অফিস ভবন নির্মাণকাজ ও নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ছোট বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ  বিদ্যালয়) ১০ তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণকাজ।

এ ছাড়া নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বড় বনগ্রাম মৌজা সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়) ১০তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ, রাজশাহী বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এবং রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণকাজ।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তার জনসভাস্থল। রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রোববার সকাল ৮টার দিকে মাঠে ঢুকতে শুরু করেন, যেটি দুপুরের আগেই ভরে যায়।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা জনসভা পরিচালনা করেন।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!