ফাইল ছবি
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করাকে রহস্যজনক বলছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে। তাই সরকারকে চাপে রাখতে নতুন কৌশলে এগোনোর পরিকল্পনা করছে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি এখনই আন্দোলনে যেতে চায় না। দলটি দুই থেকে তিন মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বা রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে দলীয় অবস্থানে পরিবর্তন আসতে পারে। মাঠের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে টালবাহানা করছে। নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুললেই তারা সংস্কারের নানা কথা বলে। অথচ সংস্কারের কাজেও গতি নেই। কোন কোন সংস্কার আগে দরকার তাও স্পষ্ট করছে না তারা। সরকার ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়- এ ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছি, যাতে তারা গণতন্ত্র রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সরকার নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। আমাদের আবারও মাঠে নামতে হতে পারে।’
দলীয় সূত্র বলছে, সরকারের কর্মকাণ্ডে দিন দিন বিএনপি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বিদেশিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপে দলটি উদ্বিগ্ন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও দলটির নীতিনির্ধারকরা শঙ্কিত। সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা মনে করেন।
দলটির আশা, সরকার শিগগিরই নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবে। না হলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করলে তা হবে অত্যন্ত ‘বিব্রতকর’, কারণ শুরুতে তারাই সরকারের প্রতি সহনশীলতার বার্তাই দিয়েছিল।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ১২-দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণ ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে— তারা জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। গত রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ সাহেব বলেছেন— ‘আমাদের আলোচনা প্রায় শেষ। আমরা এ মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় যাব। অর্থাৎ যেসব বিষয় আমরা একমত হলাম, তার একটা তালিকা করব; সম্ভব হলে একটা সনদ তৈরি করব। তাতে সবাই দস্তখত করতে পারে। সেটা করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে। এর বেশি নয়। সেটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে হতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যেই অধ্যাদেশ জারি হতে পারে। আর সেগুলো সম্ভব নয় সেগুলো পরবর্তী সংসদে আমরা উপস্থাপন করব।’ আমরা একমত হলাম। তাহলে আপনার (অন্তর্বর্তী সরকার) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে বাধা কোথায়?’’
এর আগে গত শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এনডিএমের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রলোভনমুক্ত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে।’ তারেক রহমানের এ বক্তব্যকে নির্বাচন বিষয়ে সরকারের প্রতি ‘বার্তা’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনপির নেতাদের আশা, সরকার রোডম্যাপের ব্যাপারটি স্পষ্ট করবে। নইলে ঈদুল আজহার পরে মিত্র দলগুলোকে সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এ পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারই দায়ী হবে।
১৫ মে দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে আয়োজন করা হতে পারে। তবে আগামী জুনের পরে নয়।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে ঐকমত্য তৈরিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে দলটি ঈদুল আজহার পর আবারও ধারাবাহিক বৈঠকের আয়োজন করতে পারে। সেখান থেকে মাঠের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আগের বৈঠকে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, এই সরকারের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে, নির্বাচনের রোডম্যাপ আদায়ে চাপ অব্যাহত রাখা। রোডম্যাপের ঘোষণা না আসলে ঈদুল আজহার পর আমরা মাঠের কর্মসূচিতে যাব। ঈদের পরপরই জোটের নেতাদের সঙ্গে বসে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এসআই