• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোজা ফলপ্রসূ করার ২টি উপায়


নিউজ ডেস্ক মে ৪, ২০২১, ০৯:৫৩ এএম
রোজা ফলপ্রসূ করার ২টি উপায়

ফাইল ছবি

ঢাকা : আজ ২১ রমজান। জীবন থেকে আরো কুড়িটি রোজা গত হলো। একসময় রমজান মাসই গত হবে। আমাদের অনেকের জীবনে হয়ত রমজানের নতুন হেলাল আর উদিত হবেনা। সময় বহতা নদীর মতো বয়ে চলেছে আপনগতিতে অবিরত। বুদ্ধিমান যারা তারা সময়কে মূল্যয়ান করে। অলস-অবহেলায় নষ্ট করে না। রমজান হলো বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের প্রতিটি সময় অতিমূল্যবান। জীবনের পাপ-তাপ থেকে পবিত্র হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। জাহান্নাম থেকে নিজেকে মুক্ত করার অপার সম্ভাবনাময় সময়। মুমিনের একটু দৃঢ় সংকল্পই পাল্টে দিতে পারে জীবনের গতিধারা প্রকল্প।

আমরা রোজা পালন করি। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রেরণায়। কিন্তু শুধু রোজা রাখাই কি যথেষ্ঠ? উত্তর না। রোজাকে ফলপ্রসূ করতে দুটি বিষয়ে যথাযথ মনোযোগী হতে হবে। হজরত আবু উবাউদা ইবনু জাররা (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, রোজা ঢালস্বরূপ, যাবৎ না রোজাদার তা নষ্ট করে দেয়। বলা হলো হে আল্লাহর রাসুল কিভাবে  রোজাদার তা নষ্ট করে ফেলে? বললেন, মিথ্যা বা গিবতের মাধ্যমে।’ (সহিহ ইবনে খুযাইমা-১৮৯২) হাদিস শরীফ থেকে বোঝা যায় রোজা জাহান্নাম থেকে রোজাদারকে ঢালের মতো আত্মরক্ষা করবে। তবে রোজাদারকে দুটি বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। এক. মিথ্যা। দুই. গিবত। রোজাদার এ থেকে বিরত না হলে রোজা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না।

মিথ্যা : যা সত্য নয় তাই মিথ্যা। যা বাস্তব বিবর্জিত তাও মিথ্যা। রাসুল রাসুলুল্লাহ বলেছেন, কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ যে, সে যা শোনে তাই বলে। সুতরাং কোনো কথা বিচার-বিবেচনা না করে বলাই মিথ্যা। মিথ্যা বড় অপরাধ। কবিরা গুনাহ। আর রোজা থেকে মিথ্যা বলা  পরিমাণে আরো বড় অপরাধ। সুতরাং রোজাদার মিথ্যা পরিত্যাগ না করলে সে রোজা থেকে উপকৃত হতে পারবে না। আমরা প্রতিনিয়ত মিথ্যার সাথে মিশে আছি। সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রচার। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে মিথ্যার অপপ্রচার। ব্যবস্যা-বাণিজ্য, লেনদেনে সত্য গোপন। জীবনে চলার পথে একে অপরের সাথে নানা অজুহাতে মিথ্যা বলা। সবই এর অর্ন্তভুক্ত।

গিবত : অন্যের অগাচরে, অনুপস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করার নামই গিবত। গিবত করা, শোনা দুটোই ভয়াবহ অপরাধ। পবিত্র কোরআনে  আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভায়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর।’ (সুরা  আল-হুজরাত-১২) আয়াতে গীবত করাকে মৃত ভায়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। একেতো মানুষের গোস্ত খাওয়া হারাম। তারপর মৃত মানুষ। সুতরাং গীবতের ভয়াবহতা আয়াত থেকে যথেষ্ট অনুমেয়। হাদিস শরীফেও এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় দুজন মহিলা রাজা রাখল। দিন শেষে তারা খুব ক্লান্ত হয়ে গেল। নবীজির কাছে বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দুুজন মহিলা রোজা রেখেছে। দিন শেষে তারা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো। তাদেরকে নবীজির সামনে আনা হলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বমি করতে বললেন। তারা বমি করল। তখন তাদের বমিতে রক্ত বের হলো। সবাই অবাক হলেন। তারাতো রোজ ছিল। অনাহারে ছিল। রক্তমিশ্রিত কোনো খাদ্যও খাইনি। তাহলে বমির সাথে রক্ত বের হলে কীভাবে?  তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এরা দুজন ওই কাজগুলো থেকে তো বিরত থেকেছে, যা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য সময় হালাল করেছেন। কিন্তু ওই সব কাজ থেকে বিরত থাকেনি, যা সব সময়ের জন্য তাদের ওপর হারাম করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-২৩৬৫৩) অর্থাৎ তারা দুজন গিবত করেছে।

মিথ্যা ও গিবত এ দুটো সবসময় হারাম। তবে রোজাদারে জন্য বাড়তি সতর্কতা। সুতরাং রোজার পুরস্কার হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এ মুক্তি পেতে হলে প্রতিটি রোজাদারকে মিথ্যা, গিবত, পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ প্রতিটি রোজাদারকে মিথ্যা, গিবত থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন। আমিন!

লেখক : মুহাম্মদ হাসান মুরাদ, খতিব, ভিমরুল্লা শাহী জামে মসজিদ, চুয়াডাঙ্গা।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!