• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিধিনিষেধের বেড়াজালে শ্রমিকরা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৩, ২০২১, ০৭:০৩ পিএম
বিধিনিষেধের বেড়াজালে শ্রমিকরা

ঢাকা : কাজ নেই, তাই ঘরে চাল নেই। কঠোর লকডাউন ঘোষণার আগে-পরে নেই কোনো অনুদান বা সাহায্য। করোনা লকডাউনে কর্মহীন মানুষের আজ পেটে ভাত নেই। পরিবারের শিশু ও বৃদ্বা মানুষের দুমুঠো ভাতের জন্য অনেকেই ঘুরছেন দ্বারে-দ্বারে। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে দিনমজুরদের। দৈনিক খেঁটে খাওয়া মানুষের আজ পড়েছেন মহাবিপদে। 

এ অবস্থায় সর্বাত্মক লকডাউনে কাজ হারানো নিম্নআয়ের মানুষকে নগদ অর্থ ও খাবার সহায়তা দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। জনসমাগম রোধে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু এর ফলে বিপাকে পড়েছে দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষ। 

রাজধানীসহ দেশের জেলা সদরের বস্তিতে বসবাস দিনমজুর ও ভূমিহীন অসহায় পরিবারের জীবন চলে দিন আয় দিন খেয়ে। বর্তমান এই দুর্যোগে তারা যেন আরো অসহায় হয়ে পড়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় তাদের কেউ কাজে নিচ্ছেন না। এদের নেই জমানো অর্থ বা খাদ্য। 

এ অবস্থায় সঞ্চয়হীন খেটে খাওয়া মানুষকে ঘরে রাখতে সরকার, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবিকার আগে জীবন রক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস করা ভূমিহীন এক ক্ষুদ্র ফুটপাত ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া জানান, লকডাউনের কারণে রাস্তায় বসতে পারছেন না। তার ফুটপাতের ছোট্ট তেলের দোকানটি প্রশাসন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। তাই তিনি আর বিক্রি করতে পারছে না। অথচ এই দোকানের ক্ষুদ্র আয়ে চলে তার পরিবার। এরই মধ্যে ব্যবসার যে সামান্য পুঁজি ছিল তার অনেকটাই খরচ হয়ে গেছে। 

গত বছর লকডাউনে পুঁজি হারিয়ে দুটি সমিতি থেকে দৈনিক কিস্তি পরিষোধের চুক্তিতে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলন। সে কিস্তি শোধ হতে না হতেই চলমান লকডাউনের প্রতিটি দিনি যাচ্ছে তার খুব কষ্টে। লকডাউন উঠে গেলে এখন নতুন করে ব্যবসা গোছানোর অর্থ নেই তার। লকডাউন আরো দীর্ঘ হলে জীবন চালতে পথে বসার আশঙ্কা করছেন তিনি।

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার দিনমজুর আলামিন হোসেন বলেন, এমনিই একদিন কাজ হলে একদিন হয় না। সংসার চলে অনেক কষ্টে। গত ১০দিন একদম বেকার হয়ে গেছি। বিভিন্ন পরিচত জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে দৈনন্দিন আহার চলছে। এভাবে চলতে থাকলে পেটে ভাত জুটবে না, না খেয়ে মরতে হবে।

মালেকা খাতুন নামের পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলা বলেন, আমি খাবারের হোটেলসহ ডেকোরেটরে কাজ কাম করে খাই। কিন্তু এখন কাজকাম সব বন্ধ। কী করে যে চলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার ছেলেটাও বেকার হয়ে গেছে। সামনে দিন কিভাবে কাটবে ভেবে সারা রাত ঘুমাতে পারছি না। 

রিকশাচালক লিটন মোল্যা বলেন, আমার চারটা বাচ্চা। সাথে ঘর ভাড়া। আমি রিকশা না চালাতে পারলে না খেয়ে থাকে পরিবার। পেটের দায়ে ভয়ে ভয়ে তবুও রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তাও পথে পথে পুলিশের বাধা। অনেক সময় পুলিশ রিকশা আটকে রাখে। ফলে ফাঁকে যা দু-একটা ট্রিপ দিয়ে টাকা আয় করি তা গ্যারেজ মালিককে দিতে হয়।

৮০ বছরের বৃদ্ধা আয়না বিবির জীবন চলে রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে পানের দোকান চালিয়ে। লকডাউনের কারণে গেল কয়েকদিন দোকান খুলতে পারেননি তিনি। তাই ওষুধ আর খাবার কেনার টাকা জোগাড় না হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছেন আয়না বিবি। 

অন্যদিকে সর্বাত্মক লকডাউনে ভ্যানচালক নুরুল হকও বিপাকে। কাজ না থাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না তিনি।

এদের মতো অসংখ্য দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লকডাউনে বিধিনিষেধের বেড়াজালে কারণে চরম কষ্টে আছেন। লকডাউনে কাজ হারানো এসব মানুষকে ঘরে রাখতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার তাগিদ দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নিম্নআয়ের মানুষদের বিষয়ে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ড. তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, গরিব মানুষদের সবার আগে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। খাবার বিতরণ সমাধান নয়। আর তাদের কি প্রয়োজনীয়তা তা আমরা জানি না। তাই তাদের হাতে নগদ টাকা দিয়ে দিতে হবে। 

আর জীবিকা ছাড়া জীবন চালানো অসম্ভব হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহ পরিণতি এড়াতে নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে এখনই কাজে বের হতে দেওয়া যাবে না।

এ সমস্যা বিষয়ে রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সবাই মিলে নিম্নআয়ের মানুষের খবর রাখতে হবে। তাদের খাবার ও অর্থের যোগান দেওয়া গেলেই কেবল তাদের ঘরে রেখে সর্বাত্মক লকডাউন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে।

একই বিষয়ে করোনা প্রতিরোধ জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, সরকারকে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে অল্প সময়ের জন্য হলেও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে জীবন রক্ষার জন্য। জীবন না থাকলে তো জীবিকার প্রয়োজন হবে না। তাই জীবন বাঁচাতে হবে সবার আগে। 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!