• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

খোয়া যাচ্ছে যাত্রীর লাগেজ


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০২১, ০৩:৪৬ পিএম
খোয়া যাচ্ছে যাত্রীর লাগেজ

ঢাকা : সম্প্রতি কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মাঈনুল ইসলাম। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্টে দেওয়া তিনটি লাগেজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও দুটি লাগেজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ’লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে’ অভিযোগ করে বাড়ি ফেরেন। প্রায় এক সপ্তাহ পর হারানো দুটি লাগেজের মধ্যে একটি পাওয়া যায়। অন্যটি এখনো পাননি। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র থাকায় প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিমানবন্দরে গিয়ে হারানো লাগেজের জন্য ধরনা দিচ্ছেন।

মাঈনুল ইসলাম বলেন, তার তিনটি লাগেজেই ট্যাগ লাগানো ছিল। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর তিনি দুটি লাগেজ পাচ্ছিলেন না। এক সপ্তাহ পর একটি পেলেও যে লাগেজে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে সেটিই এখনো পাননি।

তার অভিযোগ, দেশের একমাত্র বিমানবন্দরের এ অবস্থা কেন?

শুধু মাঈনুল ইসলামই নন, বর্তমানে যাত্রীদের লাগেজ না পাওয়ার অভিযোগ বাড়ছে। দীর্ঘদিন পর আসা প্রবাসী বা কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়ে ফেরা ব্যক্তিদের লাগেজ না পাওয়ার ঘটনা শাহজালালে প্রায় প্রতিদিনের চিত্র।

করোনার কারণে দর্শনার্থী কিংবা অন্য ব্যক্তিদের বিমানবন্দরের ক্যানোপিতে যাওয়া নিষেধ থাকলেও লাগেজ হারানোর ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে যাত্রীদের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে দর্শনার্থীদের ভেতরে আসা নিষেধ সেখানে শাহজালালের কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার লোকজনই শুধু থাকে। একজন যাত্রী ভুল করে লাগেজ রেখে যেতেই পারে। পরবর্তীতে এটি পাওয়ার জন্য একটি শাখাও রয়েছে। কিন্তু শাখাতে এসে পাওয়া যাবে না এটি কেমন? আবার লাগেজ বেল্টে দেওয়ার পর সেটি আসবে না এটা হতে পারে না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সেখানে সার্বক্ষণিক লোক থাকে। সেখান থেকে লাগেজ খোয়া যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

জানা গেছে, বিমানবন্দরে বিভিন্ন ফ্লাইট থেকে লাগেজ ওঠা-নামার দায়িত্বে (গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লাগেজ ভোগান্তি থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে পারছে না তারা। বিমান থেকে নেমে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লাগেজ পাচ্ছেন না। আবার পেলেও তাতে মূল্যবান জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ করে সমাধান পাওয়া দূরে থাক, যাত্রীকেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের মধ্যে বািবতণ্ডাও নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি প্যারিস থেকে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসেন সরকারি কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক। তার সঙ্গে ছিল দুটি লাগেজ। বিমানবন্দরে নামার পর একটি লাগেজ পেলেও অন্যটি পাননি। এক সপ্তাহ পর তিনি লাগেজটি বুঝে পান। কিন্তু লাগেজে থাকা কোনো মালপত্র পাননি। পরে এ ঘটনায় শাহজালালজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এমন আরেকজন ময়মনসিংহের ফুলপুরের আবদুল লতিফ। চার বছর পর  দুবাই থেকে এমিরেটস ফ্লাইটে দেশে আসেন তিনি। তার লাগেজে ছিল প্রিয়জনের কিছু দামি কসমেটিকস, চকলেট আর কিছু ইলেকট্রনিকস আইটেম। বিমানবন্দরে নামার আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি লাগেজ পান তালা ভাঙা অবস্থায়। কষ্টে অর্জিত টাকায় প্রিয়জনের জন্য কেনা জিনিসপত্র চুরি যাওয়ায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, বিমান থেকে বেল্টে দেওয়ার আগমুহূর্তে লাগেজ কেটে মূল্যবান মালপত্র সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় যাত্রীদের জানানো হয়, লাগেজ আসেনি। বলা হয়, পরবর্তী ফ্লাইটে আসবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘পরবর্তী ফ্লাইটে’ লাগেজ এলেও তা আর প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছানো হয় না। লাগেজে দামি মালপত্র থাকলে তো কথাই নেই। জানানো হয়, ওই লাগেজে অবৈধ মালপত্র এসেছে। গোয়েন্দারা লাগেজের মালিককে খুঁজছে। এ ধরনের মিথ্যা বলে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয় যাত্রীদের। এমন পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রীই লাগেজের আশা ছেড়ে দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই বিদেশফেরত যাত্রীরা তাদের লাগেজ পেতে এরকম দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। অনেকে হারানো লাগেজের খোঁজে দিনের পর দিন ধরনা দিচ্ছেন ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখায়। ঘুরতে ঘুরতে ত্যক্তবিরক্ত যাত্রীদের অনেকে আবার ব্যাগ ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে নানা অনিয়ম : যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সম্প্রতি লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শাখার অফিস সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে এতে দুটি শিফট চালু করা হয়। এর আগে এটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক শিফটেই চলত।

কিন্তু দুই শিফটে অফিস খোলা রাখার নির্দেশনা না মেনে ওই বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিরা আগের মতোই এক শিফটে অফিস চালিয়ে দুই শিফটের কার্যক্রম দেখানোর পাশাপাশি নতুন নিয়মে বেতন-ভাতা নিচ্ছিলেন।

বিমানবন্দর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, ‘বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্মীকে এ ধরনের অবৈধ মালপত্রসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছে পূর্বে।

লাগেজ না পাওয়া বা লাগেজ কাটার ঘটনা আগের চেয়ে কম। তারপরও একেবারে শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রনে রাখতে।

বিমানববন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, যাত্রীদের লাগেজ যেন সঠিকভাবে পায় আমারা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করি। এরই মধ্যেও কিছু কিছু ঘটনা আমাদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। আমরা চেষ্টা করছি এটিকে আরো কিভাবে যাত্রীবান্ধব করা যায়।

তিনি বলেন, কোন যাত্রীর লাগেজ হারালে লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ডে অভিযোগ করে পরবর্তীতে তা যেন সঠিকভাবে তিনি পান তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!