• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আসামের এনআরসির দিকে সরকারের নজর


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯, ১১:০৫ পিএম
আসামের এনআরসির দিকে সরকারের নজর

ঢাকা : ভারতের আসাম রাজ্যে বিতর্কিত চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের বিষয়গুলোর দিকে গভীর নজর রাখছে বাংলাদেশ। এনআরসি ইস্যু বাংলাদেশের জন্য কী অর্থ বহন করছে, বিষয়গুলোতে এ দেশের জন্য উদ্বেগের কোনো কারণ আছে কি না এবং এর প্রভাব দেশে কেমন হতে পারে ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেসব দিকে নজর রাখছে সরকার।

এনআরসি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে দেশটির সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বাংলাদেশকে একাধিকবার আশ্বস্ত করা হলেও ভবিষ্যতে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি কোন দিকে গড়ায়, এসব দিকও সরকারের অনেকের ভাবনায় আছে।

সূত্র জানায়, ভারতের প্রতিবেশী হিসেবে এবং তালিকায় নাম না থাকা ‘অবৈধ মুসলমান অভিবাসীরা বাংলাদেশের’ দাবি করায় বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ আছে কি না সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। তালিকায় বাদপড়া অভিবাসীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে বিজেপি সরকারের বেশ কয়েকজন অতীতে নানা সময়ে ঘোষণা দিয়েছেন।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরে ‘অভিবাসী’ রাজনীতি কোন দিকে গড়ায়, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) সরকারের কেউ কোনো কথা না বললেও দেশের জনগণ ও বিশেষ করে ধর্মপন্থি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকেও গভীর দৃষ্টি রাখছে সরকার।

নীতিনির্ধারণী সূত্রমতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ঢাকা সফরে এলে বাংলাদেশকে আশ্বাস্ত করেন, এনআরসি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। ক্ষমতাসীন বিজেপির আইনজ্ঞ সেলের সদস্য ও দলের নেতা বিবেক রেড্ডি গতকাল সর্বভারতীয় এক নিউজ চ্যানেলকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে এস জয় জয়শঙ্কর এনআরসি নিয়ে যে আশ্বাস দিয়েছেন, সেটাই শেষ কথা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে অনেক কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এনআরসি প্রকাশের ঘটনায় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও গতকাল তা প্রকাশের পর সীমান্তে জারি করা হয় সতর্কতা। দেশের সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে সিলেট সীমান্তে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে’ (বিজেবি) সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। যাদের আসামের নাগরিক তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে, তাদের যাতে ভারত কোনোভাবে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গত বছরের জুলাইয়ে প্রথমে আসামের অস্বাভাবিক নাগরিকত্বের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে কোনো বার্তা আদান-প্রদান হয়নি। শুরুতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। পরে ভারতীয় সরকারপ্রধান নিজেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন যে, খসড়া তালিকা থেকে বাদপড়া আসামের জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা ভাবছে না ভারত। ভারতের এ কথায় আশ্বস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে কেউ এনআরসির চূড়ান্ত তালিকার বিষয়ে আপাতত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভাজন এবং এর থেকে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ শুধু ভারতের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। এতসংখ্যক মানুষকে একসঙ্গে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিতকরণের প্রক্রিয়াটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে বাংলাদেশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এ প্রসঙ্গে চুপ করে থাকা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারে।

কারো কারো মতে, এনআরসির তালিকা প্রকাশের পরও ‘নাগরিকত্ব’ প্রমাণের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি, তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশের আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয়। বিজেপি সরকারের কেউ কেউ চাইলেই এত মানুষকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারবে না ‘নাগরিকত্ব’ প্রমাণের লম্বা আইনি প্রক্রিয়া থাকায়।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম তৌহিদ হোসেন মনে করেন, ‘নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি হবে। এ বিষয়ে ট্রাইবুন্যালে আপিল করা যাবে। হাইকোর্টে যাওয়া যাবে। তবে কতজনের সেটা করার আর্থিক সক্ষমতা আছে, তা দেখার বিষয়। ভারত বলছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ সরকারও এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে। যতদিন এটা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি না করছে, ততদিন এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, আসামে কথিত নাগরিক তালিকা প্রকাশের ঘটনায় এ দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মানুষ প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে। এরই মধ্যে নানা মাধ্যমে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তবে এর বড় কোনো প্রভাব দেশে পড়বে বলে মনে করেন না তারা। তাদের মতে, টুকটাক প্রতিক্রিয়া হবে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। ধর্মপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাতে পারে। এ বিষয়ে সরকার সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে আছে।

উল্লেখ্য, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হয় গতকাল স্থানীয় সময় সকাল দশটায়। অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে প্রকাশিত এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন দেশটির ১৯ লাখ ছয় হাজার বাসিন্দা।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানায়, চূড়ান্ত এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তারা ১২০ দিনের মধ্যে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাদ পড়া বাসিন্দারা ‘বিদেশি’ হিসেব চিহ্নিত হবেন না। তবে এ আপিলে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানায় দেশটির গণমাধ্যমগুলো। বাদ পড়াদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্ন আয়ের হওয়ায় তারা এ খরচ বহন করতে পারবেন না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এনআরসিতে যারা নাগরিকত্বহীন বলে ঘোষিত হয়েছে, তাদের প্রতিটি পরিবারে ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয়কর এক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আসামে রাষ্ট্রহীন ১৯ লাখ মানুষ, ছয় লাখের বেশি মুসলমান : শনিবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকেই ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দাদের চোখ ছিল জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণের (এনআরসি) সরকারি ওয়েবসাইটে। শনিবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকাশিত হয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা। নতুন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষ। তবে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ মানুষ। বাদপড়াদের মধ্যে রয়েছেন ১১ লাখেরও বেশি হিন্দু বাঙালি ও ছয় লাখের বেশি মুসলমান।

বাকি দুই লাখের মধ্যে রয়েছেন বিহারি, নেপালি, লেপচা প্রভৃতি। এর আগে গত বছরের ৩০ জুলাই ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল প্রায় ৪০ লাখ আবেদনকারীর নাম।

এদিকে গতকাল সকাল থেকেই আসামে উত্তেজনা ছিল চরমে। সরকারি ওয়েবসাইট www.nrcassam.nic.in or www.assam.mzgov.in লগইন করার হিড়িক পড়ে যায়। ফলে বেশ কিছু সময়ের জন্য সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। অনলাইনে নিজেদের নামের তালিকা দেখতে অগণিত মানুষকে ভিড় জমাতে দেখা যায় সরকার পরিচালিত সেবাকেন্দ্রগুলোর বাইরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।

তালিকা প্রকাশের পর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী নামের এক আবেদনকারী বলেন, আমার সাত বছরের মেয়ে নাজমিন ও আট বছরের ভাতিজা মাসুম তালিকায় ছিল না। এবার তাদের নাম রয়েছে। তালিকা প্রকাশের আগে আমরা আতঙ্কিত ছিলাম, এখন বেশ স্বস্তিতে আছি।

এদিকে এনআরসি থেকে বিপুলসংখ্যক বাঙালি হিন্দু বাদপড়ায় কয়েকজন বিজেপি নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে আসামের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইনের কথা বিবেচনা করছে। যার ফলে তালিকায় স্থান পাওয়া বিদেশিদের বাদ দেওয়া যায় এবং বাদপড়া সত্যিকার নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

গত শুক্রবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল জানিয়েছেন, এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদপড়া বাসিন্দারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। তিনি বলেন, আসাম সরকার বাদপড়াদের দেখভাল করবে এবং যাতে করে অপ্রয়োজনীয় হয়রানির শিকার হতে না হয় তা নিশ্চিত করবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, যতক্ষণ আপিল চলবে ততক্ষণ কাউকে বিদেশি বলা যাবে না। কারণ কাউকে বিদেশি বলার এখতিয়ার শুধু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদপড়াদের বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। বাদপড়া ব্যক্তি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন এবং আবেদনের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।

তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য। মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার নিরাপত্তা বাহিনী। গুয়াহাটিসহ সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আসাম পুলিশ আবেদন করেছে। আসামের উত্তর-পূর্ব দিকের সুরক্ষাও যথেষ্ট আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। আসাম পুলিশের তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, যেসব ব্যক্তি নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এদিকে নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র কমিশনড অফিসার মুহাম্মদ সানাউল্লাহ। দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার পরও তিনি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন। তখন তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে। গতকাল প্রকাশিত চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতেও মুহাম্মদ সানাউল্লাহর নাম নেই। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামও নেই তালিকায়। কিন্তু সানাউল্লাহর স্ত্রীর নাম তালিকায় আছে।

সানাউল্লাহ একসময় সেনাবাহিনীর সুবেদার ছিলেন। এখন তার বয়স ৫২। ১৯৮৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন। তিনি দুবার জম্মু-কাশ্মীরে এবং একবার মণিপুরে পোস্টেড ছিলেন। আসাম সরকারের অফিসার চন্দ্রমল দাস তদন্ত করে সানাউল্লাহকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে তাকে নোটিশ দিয়ে বলা হয়, আপনি যে ভারতীয় তা প্রমাণ করুন। ২০১৮ সালে তিনি ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন। ২৩ মে তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর তাকে গোয়ালপাড়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এরপর মিডিয়াতে এ খবর প্রচার হলে মুখ খোলেন চন্দ্রমল দাস। তিনি বলেন, তিনি একজন শ্রমিক সম্পর্কে তদন্ত করে জানতে পেরেছিলেন, তার জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু তিনি সানাউল্লাহ নন।

নতুন তালিকা প্রকাশের পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে আসাম। এনআরসিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেছেন রাজ্যটির অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (আসু)। এই ইস্যুটি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়। এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ জানান, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় খুশি নই। এটি অসম্পূর্ণ এনআরসি হয়েছে। তালিকা শুদ্ধ করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে। আসুর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনআরসি থেকে বাদপড়ার সংখ্যা অপ্রত্যাশিত। যা ভাবা হয়েছিল তা থেকে অনেক কম বলে দাবি আসুর। পাশাপাশি অভিযোগ, এ দেশের প্রকৃত নাগরিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালের পর পরিচালিত প্রথম আদমশুমারির মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে সংশোধিত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রয়টার্স নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সেসময় জানিয়েছিল, রাজ্যের ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ মানুষ তালিকায় স্থান পায়নি। এদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী কিংবা মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এ বছর জুনে তালিকায় আরেক দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সবমিলে বাদপড়া ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বাদ পড়াদের মধ্যে ৩৬ লাখ মানুষ নাগরিক তালিকায় স্থান পাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আর খসড়া তালিকায় স্থান পাওয়া ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের মধ্যে ২ লাখের স্থান পাওয়া নিয়ে আপত্তি উঠেছিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!