• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
অজ্ঞাত ভাইরাসে মৃত ১৭, আক্রান্ত ৬০০, বন্ধ গণপরিবহন

চীনের উহান শহর এখন ‘নিষিদ্ধ নগরী’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জানুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৩:৫৬ পিএম
চীনের উহান শহর এখন ‘নিষিদ্ধ নগরী’

ঢাকা : চীনে রহস্যময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (২২ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ছয়শর ঘরে। এছাড়া এটি আশপশের আরও প্রায় ৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আয়োজিত এক জরুরি বৈঠকে এমন তথ্যই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO (ডব্লিওএইচও)।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রাণঘাতী এও ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত চীনের উহান শহর থেকে সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সেখানকার বাসিন্দাদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শহর ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এই ভাইরাসের সংক্রামণ প্রতিরোধে উহান শহরে ভ্রমণের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।

চীনে গত ডিসেম্বর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে এই নতুন ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমণে মঙ্গলবার পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তখন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বলা হয়েছিল ২০০ জন। কিন্তু মাত্র একদিনের ব্যবধানে নতুন ভাইরাসে দেশটিতে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। এছাড়া এতে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬০০তে পৌঁছেছে।

বৃহস্পতিবার চীনের একটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে নতুন করে আরো ৫৭১ জন এই রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে বুধবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে আরও ২ হাজার ১৯৭ রোগী আছেন যারা আক্রান্ত কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শুধু চীন নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডে চারজন এতে আক্রান্ত হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে একজন করে মোট চাজন এতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে চীনের বাইরে সবমিলিয়ে এ জাতীয় ৮ রোগীর খোঁজ পাওয়া গেল।

চীনের বাইরেও রহস্যময় ভাইরাসটির বিস্তার ঘটায় বিশ্বজুড়ে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ ও মৃত্যু ঠেকানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তারা।

বৈঠকে এর বিস্তার রোধে বিশ্ব জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাসের উৎস খোঁজার চেষ্টা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির প্রাথমিক উৎস প্রাণী হতে পারে। তবে চীনা কর্মকর্তাদের দাবি এই ভাইরাস ছড়ানোর সঙ্গে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। করোনা ভাইরাস ঠেকানোর প্রচেষ্টা জোরদার করেছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো। ভাইরাসটিকে ২০১৯-এসসিওভি নামে ডাকা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ভ্যান কেরখোভে জানিয়েছে, চীন থেকে নতুন যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তার সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালকে নির্দেশনা দিয়েছে তারা। এছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের অনেক দেশ বিমানবন্দরে চীনা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে চীনের উহানে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গণপরিবহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। খবর যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির। উহানের বাসিন্দাদের এক সপ্তাহের মধ্যে শহরটির বাইরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অথচ আসন্ন চান্দ্র নববর্ষের ছুটি উপলক্ষে কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করছেন।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয় উহানে। ভাইরাসটি ইতোমধ্যে চীনের অন্যান্য অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে দিনব্যাপী বৈঠক শেষে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি কমিটি জানিয়েছে, এখনও বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

ডব্লিউিএইচও-এর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস ঘেব্রেয়েসুস বলেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে আরও তথ্য জানা দরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কমিটি বৃহস্পতিবার আবার বৈঠক করবে।

বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হলো ডব্লিউএইচও সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা। এর আগে সোয়াইন ফ্লু, জিকা ভাইরাস এবং ইবোলা মোকাবেলায় জন্য বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, নতুন চিহ্নিত ভাইরাসটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ভাইরাসের সঙ্গে ২০০২-০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের সংযোগ থাকতে পারে। ওই সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে প্রায় ৬৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!