• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠি


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৫:০৪ পিএম
ব্যাংক খাতের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠি

ঢাকা : ব্যাংক খাতের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংক খাতের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পৃথক দুটি চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) দৃষ্টিতে ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর। সংস্থাটির দাবি, গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে ঋণের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীরাও। আবার আর্থিক খাত গতিশীল হওয়ার কারণেই মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ। বেড়েছে মাথাপিছু আয়ও। ফলে ব্যাংক খাতের দিকে নতুন সরকার আগের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চাইছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, ব্যাংক খাতের বিভিন্ন ধরনের তথ্য চেয়ে গত ৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা অধিশাখা-২ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি আরেকটি চিঠিতে ১২ ধরনের তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ব্যাংক খাত তথা আর্থিক খাত বড় ভ‚মিকা রাখছে। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত এবং গৃহীতব্য কার্যক্রমের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন চাহিদানুযায়ী তথ্য প্রস্তুতের কাজ চলছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় এই সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। সরকারও চাইছে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক দুটি চিঠি পাঠিয়েছে।

অবশ্য এর আগে ‘সরকারের সাফল্যের ১০ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভ‚মিকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, গত ১০ বছরে অনেক প্রসারিত হয়েছে ব্যাংকিং খাত। এই সময়ে বেড়েছে ব্যাংক ও শাখার সংখ্যা, বেড়েছে আমানত ও ঋণের হারও। বিশেষ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ।  

বিশেষ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে যেখানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮ সালের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ১০ বছরে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছরে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা, আর ঋণ বেড়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, উল্লিখিত সময়ে আমানত ও ঋণ বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি।  প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সীমানা আরও বাড়াতে বিভিন্ন গাইড লাইন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদেশে অর্থপাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণসহ ১২ ধরনের তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।

চিঠিতে যেসব বিষয়ের ওপর তথ্য চাওয়া হয়, তা হলো- ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ, ব্যাংকিং খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নে টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয়করণ, বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) আওতা বৃদ্ধিকরণ, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা মোবাইল ব্যাকিংয়ের অগ্রগতি, আর্থিক খাতের লেনদেনে ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণ এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৫-১৭ বাস্তবায়ন।

অর্থমন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে যেসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়, তা হলো-  বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধি, আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করার প্রয়াস অব্যাহত রাখা, অ-কৃষি খাতের সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা এবং সুপারিশসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বরাদ্দ দ্বিগুণ করা, পল্লী জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, সব ক্ষুদ্র ঋণে নারীর অগ্রাধিকার প্রদান, সহজ শর্তে সময়মতো কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!