• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিষিদ্ধ হলেও কর্তৃপক্ষের সামনেই পাহাড় কাটার মহোৎসব


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১১, ২০১৬, ০৯:৫৪ এএম
নিষিদ্ধ হলেও কর্তৃপক্ষের সামনেই পাহাড় কাটার মহোৎসব

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

সকল প্রকার বিধি-নিষেধ উপেক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সামনেই দেশে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়া তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সব ধরনের পাহাড় কাটার ওপর উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে।

মূলত নির্বিচারে পাহাড় কাটায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই হাইকোর্টে পাহাড় কাটা বন্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের ওই আদেশের কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। এমনকি পরিবেশ কর্মী ও সাধারণ মানুষ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে একেবারেই নিরব।

বরং তাদের সামনেই নির্বিচারে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে আসন্ন বর্ষায় বড় ধরনের ভূমি ধসের মতো বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর সবচেয়ে সোচ্চার থাকার কথা থাকলেও চট্টগ্রামে ওই দফতরের আশপাশেই প্রতিদিনই পাহাড় কাটা হচ্ছে। তারপরও ওই দফতর সংশ্লিষ্টরা তা মানতে নারাজ।

অথচ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে রাতের আঁধারে নির্বিচারে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানেই চলছে পাহাড় কাটা। রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, মীরসরাই, বোয়ালখালী ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের ৬টি মৌজায় প্রতিদিনই পরিবেশবিধ্বংসী পাহাড় কাটা কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে।

কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই এমন অজুহাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনার পর মামলা করা হলেও পরিবেশবিরোধী এ কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলছে না।

সম্প্রতি আবাসন ব্যবসায়ীরা দেশের পর্যটন জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এমনকি পাহাড় কাটার সঙ্গে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও জড়িত। প্রভাবশালীরা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন থানায় পাহাড় কেটে আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে।

তাছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপও অনুমোদনের বাইরে গিয়ে পাহাড় কেটে কারখানা স্থাপন করছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ রাউজান উপজেলায় ২০১২ সালে পিংক সিটি ১ ও ২ নামে দুটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রায় ৪০ একর ফসলি জমিতে তৈরি আবাসন প্রকল্প ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি মাটি।

উপজেলার বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই জানে না। একই অবস্থা পটিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, হাটহাজারীসহ অন্যান্য এলাকাতেও। অভিযোগ রয়েছে─অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করেই পাহাড় কাটা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকায় ২০০-২৫০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে আবাসিক প্লট তৈরি করা হচ্ছে। অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার পরও প্রশাসনে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একইভাবে শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় বন বিভাগের মালিকানাধী প্রায় ১০ একর জমি দখল করে পাহাড় কাটা চলছে।

প্রভাবশালীরা ওসব পাহাড়ে আবাসন প্রকল্প ও প্লট তৈরি করে বিক্রি করছে। আর পাহাড় কেটে প্লট তৈরির পর প্রতিটি বিক্রি করছে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকায়। খোদ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মচারি নেতাদের নেতৃত্বেই পাহাড় কাটা চলছে। ফলে পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসছে না বলে জানিয়েছেন এ কাজে নিয়োজিত কর্মীরা।

এদিকে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশনাকে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. মকবুল আহমেদ জানান─হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়টি অনেক পুরনো। ফলে রিটের বিষয়গুলো পর্যালোচনা না করে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে স্থানীয় পরিবেশবিদ ও সাধারণ মানুষ বলছেন─পাহাড় কাটার প্রমাণ পেতে সরেজমিন পরিদর্শনের প্রয়োজন নেই। বরং প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ফুটেজের মাধ্যমেও পাহাড় কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা যায়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছাই প্রধান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমিন জানান, পাহাড় কাটার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সরেজমিন পরিদর্শনেও পাহাড় কাটার ঘটনা পাওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!