বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের ৩১৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে এই খাতের শিল্পমালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে আজ শনিবার পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় যে গত তিন বছরে বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে ৬১৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরও ৩১৯টি কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে।’
গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারের অবমূল্যায়ন ও বিশ্ববাজারে পোশাকের দরপতনের কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানান বিজিএমই সভাপতি।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে সেই সাথে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য উৎসে কর কর্তনের হার অর্ধেক কমিয়ে গত অর্থবছরের মতো শূন্য দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
পাশাপাশি পোশাক শিল্পের সহযোগী খাতগুলোকে মূল্য সংযোজন করমুক্ত (মূসক) রাখার এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কমুক্ত করারও দাবি তোলা হয়।
ছিদ্দিকুর আরও বলেন, “শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প ভ্যাটমুক্ত হলেও রপ্তানি সহায়ক সেবাগুলোর ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য আছে। রপ্তানি সহায়ক সেবাগুলো ভ্যাটমুক্ত করার অনুরোধ করছি।”
পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই’১৫ থেকে এপ্রিল’১৬) পোশাকখাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেটা প্রতিযোগিতার বাজার ও নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে যথেষ্ট নয়।”
গত পাঁচ বছর ধরে ১০ শতাংশ হারের রপ্তানি আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি এবার আরও বাড়ার প্রত্যাশা ছিল বলে জানান বিজিএমই সভাপতি।
২০২১ সাল নাগাদ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে হলে বছরে ১২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু বিগত ২২ মাসে অর্জিত প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
“সুতরাং আমরা এখনও গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় তিন দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালের কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ পিছিয়ে আছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলিভেনিয়া ও কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বরাত দিয়ে এই পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, বিশ্বজুড়ে সবকিছুর দাম বেড়েছে, কমেছে শুধু তৈরি পোশাকের দাম।
“বিগত ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য পোশাকপণ্যের মূল্য ৪০ শতাংশ কমেছে। বিপরীতে প্রতিবছর উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৮-১০ শতাংশ হারে।”
পণ্যের দরপতন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশীয় মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
“বিগত চার বছরে ডলারের বিপরীতে টাকা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। পক্ষান্তরে এই সময়ের মধ্যে ভারতীয় মুদ্রার ৪০ দশমিক ০১ শতাংশ ও তুরস্কের মুদ্রার ৬৮ দশমিক ৪২ শতাংশ অবমূল্যায়ন হওয়ায় তাদের রপ্তানি সক্ষমতা বেড়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে এই বিজিএইএ নেতা বলেন, “অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান নিরাপদ কারখানা প্রতিষ্ঠায় স্থানান্তরিত হতে চাচ্ছে; অনেকে গ্রিন ক্যাটাগরিভুক্ত হয়েছে, অনেকে চেষ্টা করছে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে কারখানা সচল করতে পারছে না।
“আশুলিয়া, সভার, গাজীপুর, কোনাবাড়ি, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় দৈনিক ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। নুতন বিদ্যুৎ সংযোগ ও লাইন স্থানান্তর নিয়েও হয়রানির শিকার হয় শিল্প মালিকরা।”
ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদহার অত্যন্ত বেশি। চীনে সুদের হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ।”
তবে সরকার ৫ শতাংশ সুদে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “পোশাক খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে একটি ওয়ান স্টোপ সেল গঠন করা অন্তত্য জরুরি হয়ে পড়েছে।”
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান, এস এম মান্নান, মাহমুদ হাসান খান, মোহাম্মদ নাছির উপস্থিত ছিলেন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/মে
আপনার মতামত লিখুন :