• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে কুটিরশিল্প


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৪, ২০১৬, ১১:৩১ এএম
বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে কুটিরশিল্প

সোনালীনিউজ ডেস্ক

বাংলা বর্ষবরণ, বসন্তবরণসহ বিভিন্ন উৎসবের পরিধি গত দুই যুগে বেড়েছে। এসব উৎসব ঘিরে দেশের হস্ত ও কুটিরশিল্পের অর্থনীতিও বড় হয়েছে। এ সময়ে দেশের এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্যিক কারণে উৎসবগুলোতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অংশ নিচ্ছে করপোরেট বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে উৎসবের আয়োজন বাড়ছে ও আকার বড় হচ্ছে। মানুষের অংশগ্রহণও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলা উৎসবগুলোতে দেশের মানুষ খাবার ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের বিশেষ গুরুত্ব দেন। পারিবারিক আয়োজনেও এর বিশেষ ছাপ থাকে।

কুটিরশিল্পে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি : -আবহমানকালের হস্ত ও কুটিরশিল্প বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্য রক্ষার সঙ্গে হাল ধরেছে দেশের অর্থনীতির। এ খাতের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনেছে। আর কম পুঁজিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থান করছে। শুধু তাই নয়, গ্রামের বৃদ্ধ ও নারীদের স্বাবলম্বী করতেও এ খাত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ১৯৬১ সালে দেশে হস্ত ও কুটিরশিল্পের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৩৫ হাজার, ১৯৯১ সালে চার লাখ পাঁচ হাজার, ২০০৫ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার। আর বর্তমানে দেশে কুটির শিল্পের সংখ্যা আট লাখ ৩০ হাজারের অধিক। এ শিল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৯ লাখেরও বেশি মানুষের।

উৎসবে কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের লালন : উৎসব ঘিরে বাঙালিয়ানার পরশ ছড়াচ্ছে বাঁশ, পাট, কাঠ, বেত, তাঁত, মৃত্তিকার তৈরি হস্ত ও কুটিরশিল্প। এ শিল্প আজ শহুরে জীবনধারার অন্যতম উপাদানও বটে। ইট-কাঠের দালানের গৃহ সাজসজ্জায় এসব পণ্যসামগ্রীই বিশেষ অনুষঙ্গ। ফলে সারা বছরই ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয়। তবে বাংলা উৎসব ঘিরে এর কদর কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশে বাংলা উৎসবগুলোতেও কদর পায় ঐতিহ্যময় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প।

ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উৎপাদকদের সমিতি বাংলাক্রাফটের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল বলেন, ‘বর্ষবরণের উৎসবে সারা দেশে কয়েক হাজার মেলা বসে। এর মধ্যে মাসব্যাপী মেলার সংখ্যা প্রায় ২৭০টি। এর মূল আকর্ষণ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প।’

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের শতাধিক দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি যোগ করেন শাহজালাল।

বেড়েছে তাঁত, পাট, বাঁশ ও বেতের চাহিদা : প্লাস্টিকের আগ্রাসনে বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প বাজার কিছুটা কমলেও কয়েক বছরে তার পরিমাণ বেড়েছে। শহরগুলোতে বর্ষবরণ ঘিরে বৈশাখী তাঁত মেলার আয়োজন করা হয়। এতে তাঁত পণ্যের বিক্রি বাড়ে কয়েক গুণ।

হস্ত ও কুটিরশিল্পের উৎপাদন ও রপ্তানিকারক গোলাম আহসান বলেন, হস্তশিল্প রপ্তানি করে দেশ প্রতিবছর ৭২০ কোটি টাকা আয় করে। এর মূল উপাদান বিভিন্ন গাছের পাতা, পাট, পাটখড়ি, বাঁশ, কাঠসহ পতনশীল উপাদান।

আহসান বলেন, বাংলা উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। রপ্তানির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারেও হস্তশিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মত : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে বাংলা উৎসবগুলোর অবশ্যই ইতিবাচক দিক রয়েছে। যেকোনো বিশেষ উৎসবেই বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। এসব উৎসবের চাহিদা পূরণে বিশেষ কিছু পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয়। বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোতে দেশীয় কাঁচামালের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।’

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘এবার চাকরিজীবীদের বোনাসের বাড়তি টাকার কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এতে বৈশাখের উৎসবে কেনাকাটা বাড়তে পারে।’

ব্যবসায়ী সমিতির ভাষ্য : ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ বলেন, ‘সারা দেশে প্রায় ২৫ লাখ দোকান রয়েছে। বর্ষবরণে বাজার দুটি কারণে খুবই ভালো যাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতার প্রভাব পড়বে।’

কাদের কিরণ আরো বলেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় ছয় হাজার বুটিক ও ফ্যাশন হাউস রয়েছে। এসব দোকানের ব্যবসার প্রধান মৌসুম বর্ষবরণ ও অন্যান্য উৎসব। এরই মধ্যে বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে।’

ব্লক-বাটিকের বাজার : পোশাক প্রস্তুত ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সারা বছরের ব্যবসার অর্ধেক হয় রোজার ঈদে। পহেলা বৈশাখে ২৫ শতাংশ। বাকিটা সারা বছর। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বৈশাখে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কম হবে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের কো-চেয়ারম্যান ও এবি ফ্যাশন মেকারের মালিক সানাউল হক বাবুল বলেন, ‘বৈশাখের ফ্যাশনে নতুনত্ব আসছে। ফ্যাশনের বাজার শহর থেকে গ্রামে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এবার গতবারের চেয়ে এবার বাজার ভালো যাচ্ছে।’

রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, শান্তিনগর, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি বুটিক ও ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেছে, ব্র্যান্ড শপগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি ও বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। দোকানিদের প্রত্যাশা, গতবারের মন্দার ঘাটতি এবার কমবে।

নববর্ষে ব্যস্ত মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা : অন্য সময়ের তুলনায় বৈশাখে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ে। বৈশাখ উপলক্ষে ২০-২৫টি বাড়তি আইটেমের মিষ্টি তৈরি হয়। এমনটি জানিয়েছে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফাকচারস অ্যাসোসিয়েশন।

সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও ভাগ্যকুল মিষ্ঠান্ন ভাণ্ডারের মালিক মাধব চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘বৈশাখ জাতীয় উৎসব। সকল ধর্মের মানুষ উৎসবটি পালন করেন। বাঙালির যেকোনো উৎসবেই খাবারদাবার বাড়ে। মিষ্টির ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হয় না।’

‘হালখাতা, মেলা, যাত্রাপালাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানেও মিষ্টির চাহিদা বাড়ে। নববর্ষে হালখাতাকে কেন্দ্র করে মিষ্টির বাজার তিন-চার গুণ বাড়ে। শহরে হালখাতার প্রচলন না থাকায় মিষ্টির চাহিদা বাড়ে দ্বিগুণের বেশি’, যোগ করেন মাধব চন্দ্র ঘোষ।

ব্যস্ত মুদ্রণশিল্পের কর্মীরা : দেড় মাস আগে থেকে তুলনামূলক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দেশের মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। ছাপাখানাগুলোতে প্রতিষ্ঠানের নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড, ক্যালেন্ডার, কাগজের টুপি, কাগজের হাতপাখাসহ বিবিধ পণ্যের অর্ডারের সরবরাহ চলছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, ‘দেশে সাত হাজার মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যান্য কাজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা বর্ষবরণের উৎসবে ১২-১৪ কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা হয়। গত পাঁচ বছরে এর পরিমাণ বেড়েছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!