• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগের সম্মেলন: পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু


সোনালী বিশেষ জানুয়ারি ৮, ২০১৮, ১১:০৪ এএম
ছাত্রলীগের সম্মেলন: পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

ঢাকা: ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের খবরে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয়বস্তু এখন মার্চে অনুষ্ঠিতব্য ২৯তম সম্মেলনকে ঘিরে। বয়সের কারণে যারা প্রার্থী হতে পারবেন না তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সাবেক হওয়ার ক্ষণ গণনা। রাজনীতিতে কাক্সিক্ষত ক্যারিয়ার গড়তে না পেরে চাকরির বয়স পার করে আবার অনেকে ডুবছেন হতাশায়।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করায় তারা অনেকটা আশাহত ও বিমর্ষ। এদিকে সম্মেলনের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই পদপ্রত্যাশীরা নেমে গেছেন মাঠে।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনেকটা আচমকায় ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের ঘোষণা আসে। গত দুই দশকে এত অল্প সময়ে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের ওপর সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের যে কথিত সিন্ডিকেট রয়েছে তাদের অনেকেই নাখোশ। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক সভাপতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায়ও অনেকে চটেছেন বর্তমান কমিটির ওপর। এত তাড়াতাড়ি কেন ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঘোষণা এলো- এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতার সঙ্গে কথা হয়।

তারা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল সে সিন্ডিকেটেই মান অভিমান। এক নেতা বলেন, সাবেক কেন্দ্রীয় কোনো সভাপতির কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া যায়; কিন্তু সাবেক কোনো ইউনিট প্রধানের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগকে আরও সুশৃঙ্খল করার প্রক্রিয়া হিসেবেই সময়মতো সম্মেলনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

এর পাশাপাশি দুইটি জেলা ইউনিটের কমিটি নিয়েই মূলত বর্তমান কমিটিকে এ চ্যলেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দুই পদের নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। আর রংপুর বিভাগের একটি জেলায় কমিটি গঠন নিয়েও অনুরূপ সমস্যা হয়েছে। এসব বিষয়ে অনেক অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও জমা পড়েছে।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, যেহেতু ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার ২৯ বছর বয়সের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই সময়মতো সম্মেলন আয়োজনের দরকার। না হলে অনেক ছাত্রনেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়।  

কয়েকদিন ধরেই ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের গুঞ্জন চলছিল। গতকাল যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন সম্মেলনের, তারপর থেকেই তরুণদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। মূলত যাদের আগামীতেও নেতৃত্বে আসার মতো বয়স ও সম্ভাবনা রয়েছে তাদের মধ্যে উদ্দীপনা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

 অনেকে আবার এ আনন্দ প্রকাশ করতে পারেনি- পাছে শীর্ষ নেতৃত্ব নাখোশ হয়ে যায় তাই। যারা সাবেক হয়ে যাবেন তাদের মধ্যে একরকম বিষাদ ভর করেছে। অনেকের চাকরির বয়সও নেই। রাজনৈতিকভাবেও তেমন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।

নতুন সম্মেলনকে ঘিরে ডজন নেতা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই গত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সারা দেশে বিভিন্ন জেলা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে খুদে বার্তায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ত্রাণ সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, কৃষি সম্পাদক বরকত হাওলাদার, কর্মসূচি সম্পাদক রাকিব হোসেন, পরিবেশ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বিপ্লব, বিজ্ঞান সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ আরেফিন, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাজহার শামীম,

সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ইমদাদ সোহাগ, উপ-কর্মসূচি সম্পাদক মুরাদ হায়দার টিপু, উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক নাইমুর রহমান, উপ-স্কুল সম্পাদক খাঁজা ফয়েজ সুজন, সহসম্পাদক এনামুল হক প্রিন্স, খাদেমুল বাশার জয়, মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সরকার রায়হান জহির, জসিমউদ্্দীন হলের সভাপতি আরিফ হোসাইন, এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজ রয়েছেন আলোচনায়।

এদিকে কাউন্সিলের সময় জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা, যারা এতদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। সম্মেলনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন (যা পরে স্থগিত হয়েছিল) আহবানকারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান বলেন, নেত্রীর কাছে একটা বার্তা চাইছিলাম। সেই বার্তাটা আমরা পেয়েছি। সম্মেলন হওয়া-না হওয়াতে আমার খুশি-অখুশির কিছু নেই। কিন্তু যখন গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা আর সংগঠন গতিশীল করার জন্য নেত্রীর এই সিদ্ধান্তে খুশি।

সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, আমরা নেত্রীর দৃষ্টি আর্কষণের জন্য সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম। মাননীয় নেত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নেত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা সন্তুষ্ট।

শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, নেত্রীর এই নির্দেশনায় আমরা সন্তুষ্ট। আগামীতে নেতৃত্ব বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন রাব্বানী। বলেন, এবার যেন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজে যাচাই-বাছাই করে, খোঁজখবর নিয়ে যেন যোগ্য প্রার্থীদের নেতা নির্বাচন করেন।

নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হলে যাদের প্রার্থী হওয়ার মতো সুযোগ ছিল এমন কাউকেও নেতৃত্ব আনা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভালো বক্তা, সংগঠক, মেধাবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন কাউকেই দেখা যেতে পারে আগামী নেতৃত্বে।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও আগামী সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। কারণ তাদের বয়স এখনো ২৯ ছাড়ায়নি।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!