• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আদালতের পর্যবেক্ষণ

দুই কাউন্সিলরের দ্বন্দ্বেই ৭ খুন


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২২, ২০১৭, ০৪:৫৮ পিএম
দুই কাউন্সিলরের দ্বন্দ্বেই ৭ খুন

নারায়ণগঞ্জ : সাত খুন মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণে আদালত বলছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুইজন কাউন্সিলর নূর হোসেন ও নজরুল ইসলামের মধ্যকার বিরোধ ও দ্বন্দ্বেই সাত খুনের ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে কর্মকর্তাদের নিয়োগে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।’

রোববার (২২ জানুয়ারি) সাত খুনের মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গত ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলার রায় দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন।

ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘র‌্যাব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল এসব কাজে র‌্যাবের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। র‌্যাব একটি প্রশংসিত বাহিনী। র‌্যাবের উচ্চাভিলাষী কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে এ সাত খুনের ঘটনা ঘটলেও র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি।’

বিচারক র‌্যাবকে তিরস্কার করেছেন উল্লেখ করে ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘তিরস্কার মানে ভবিষ্যতে যাতে এ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বিচারক এটাইকেই তিরস্কার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারক পর্যপেক্ষণে আরও বলেছেন, নূর হোসেনের টার্গেট ছিল নজরুল ইসলাম। দু’জনেই এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন। দু’জনেই সন্ত্রাসী ছিলেন, দু’জনের ছিল বিশাল বাহিনী। তাদের দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রাণ হারাতে হয়েছে নিরীহ ছয় জনকে।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, ‘ মামলার জুডিশিয়াল রেকর্ড, রায় ও ডকুমেন্ট হাইকোর্টে পাঠানো হবে। ডেথ রেফারেন্স এই মামলার শুনানি হবে। আমরা আশা করবো নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টেও বহাল থাকবে।

তিনি জানান, ‘ সাত খুনের দুটি মামলার রায় ১৬৩ পাতা করে। প্রতি মামলায় ১১ হাজার করে লাইন। মোট ২ হাজার লাইন। যা সম্পূর্ণ ইংরেজিতে রায় দেয়া হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি আলোচিত সাত খুন মামলার রায়ে ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশে দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জন
মৃত্যুদণ্ড আসামিরা হলেন- গ্রেপ্তার থাকা প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা (এমএম রানা), হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দ বালা, র‌্যাবের সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল।

পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান, জামালউদ্দিন, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, এনামুল কবীর। এসব আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

৯ জনের কারাদণ্ড
অপহরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে করপোরাল রুহুল আমিনের ১০ বছর, এএসআই বজলুর রহমানের ৭ বছর, হাবিলদার নাসির উদ্দিনের ৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদের ১০ বছর, সৈনিক নুরুজ্জামানের ১০ বছর, কনস্টেবল বাবুল হাসানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। পলাতক আসামিদের মধ্যে হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, কামাল হোসেনের ১০ বছর ও মোখলেসুর রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। এর তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে উঠে ছয়জনের লাশ। পরদিন আরও একজনের লাশ ভেসে ওঠে নদীতে। নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকার ছাড়া বাকি নিহতরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়ি চালক মো. ইব্রাহীম। এরপর স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।

লাশ উদ্ধারের একদিন পর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ১১ মে একই থানায় আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা দুটি এক সঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!