• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য ভূমি কমিশন বাস্তবায়িত হলে লাভ পাহাড়িদের


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬, ০৯:২২ পিএম
পার্বত্য ভূমি কমিশন বাস্তবায়িত হলে লাভ পাহাড়িদের

ঢাকা: পার্বত্য ভূমি কমিশন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে বাঙালিদের বঞ্চিত না করেই পাহাড়িরা লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীদের ভূমি হারা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। সেখানে বাঙ্গালীরা ভূমিহারা হলে ওই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবিধানের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইন শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বেসরকারি সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান, ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক)।

সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক সৈয়দ ইবনে রহমত। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন, সম-অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কামাল ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সহ-সভাপতি শহিদুর রহমান তামান্না। সভা সঞ্চালনা করেন, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর আফরিনা হক।

প্রধান অতিথি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ভূমি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ননা করে বলেন, সঠিকভাবে ভূমি কমিশন বাস্তিবায়িত হলে পাহাড়ীরা লাভবান হবে। তবে এর জন্য বাঙ্গালীদের বঞ্চিত করার প্রয়োজন নেই।

তার মেয়াদকালে পাহাড়ি নেতাদের নানা অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে ভূমি কমিশনের এই সাবেক বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্র। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ অঞ্চল বলার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। তাই পার্বত্য এলাকায় আদিবাসী সংক্রান্ত কোন সমস্যাও নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের পুনর্বাসিত পাহাড়িদের ভূমি সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এর বাইরে এ কমিশন আর কোন কাজ করতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব বাঙ্গালী আছেন তারা সেখানে বাংলাদেশী হিসেবে বসবাস করছেন। তাই তাদেরকে সেখান থেকে সরানোর কোন সুযোগ সংবিধানে নেই। আমাদের সব সমাধান সংবিধানের ভেতরেই অনুসন্ধান করতে হবে।

বিশেষ অতিথি ফিরোজা বেগম চিনু এমপি বলেন, সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন চান না। তিনি যা বলেন তা বিশ্বাস করেন না, আর যা বিশ্বাস করেন তা বলেন না। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সন্তু লারমা উপজাতী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্তু লারমা এখন আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি করে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের একটি অংশ অস্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রখেছে।

সেখানে উপজাতীয়রাও তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। উপজাতীয়দের চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্রের কারণে সেখানে সেনাবাহিনীর অবস্থান করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের গণমাধ্যমগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে একপেশে লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। আড়ালে আরও মানুষের যে কষ্ট আছে তা প্রকাশ করা হয় না।

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইব্রাহীম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সমস্যা বিরাজ করছে তা কোন দলের বা পক্ষের নয়। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির সময় উপজাতীয়দের একটি গোষ্ঠি খুব চালাকি করে পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠনের দাবি তোলে। এ কমিশনের মাধ্যমে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের ভূমির অধিকার হারা করতে চায়। যা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সংশোধিত পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনীতে কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের অধিকাংশ সদস্য উপজাতীয় হওয়ায় এ কমিশন চাইলেও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। কোনো উপজাতীয় সদস্য আন্তরিক হয়ে নিরোপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে তাকে হত্যা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা লাশ ঝুলিয়ে রাখবে দৃষ্টান্ত হিসেবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও উপজাতীয়রা নিজেদের মতো করে সমাধান করতে চান। উপজাতীয় নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা দুটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে ওই এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের সরে আসার ব্যবস্থা করছেন। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে সমতলের বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে গেছেন। তাই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে সেখানে বাঙ্গালীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা হচ্ছে- সন্তু লারমা চান না বাঙালিরা সেখানে বসবাস করুক। সন্তু লারমার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্তু লারমা দেশের আনুগত্য স্বীকার করেন না, স্বাধীনতার সময় তার কী ভূমিকা ছিলো তা জাতি জানে না। তিনি কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের সরিয়ে নেয়ার দাবি তোলেন?

পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করলেও চাকমা সম্প্রদায় সেখানে একক আধিপত্য বিস্তার করে বাকি সম্প্রদায়গুলোকে বঞ্চিত করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা সময়ের দাবি বলেও তিনি মন্তব্য করেন তিনি।

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, আজকে যদি কোনো জাতীয় দূর্যোগ হয় তাহলে বিপুল সংখ্যক লোককে কোথায় সরানো হবে ? কাজেই দেশের এক দশমাংশ ভূখন্ড কোনো গোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া ঠিক হবে না। বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে আরো বেশী করে বাঙালী পাঠানো প্রয়োজন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো অঞ্চল সমতলের থেকেও বেশী উন্নত। সেখানে উন্নয়নের নামে যা কিছু হয়েছে তার শতকরা ৮০ ভাগ চাকমারা ভোগ করায় বাঙালী ও অন্যান্য উপজাতিরা বঞ্চিত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ভূমি কমিশনের নতুন সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক ও আন্দোলন হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। আশা করছি এই সেমিনারের মাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্য, উপাত্ত ও বিশ্লেষণ সরকার বিবেচনা করে সকল পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!