• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিটিসেল!


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৪, ২০১৬, ১০:৪১ এএম
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিটিসেল!

দেশের সবচেয়ে পুরনো মোবাইল অপারেটর সিটিসেল বন্ধ হওয়ার পথে। সারাদেশে সব মিলিয়ে ৮৭৬টি টাওয়ারের (বিটিএস) মধ্যে প্রায় ৭০০টি বন্ধ হয়ে গেছে এই কোম্পানির। বাকি ১৭৬টি টাওয়ারও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সিটিসেলের টেকনিক্যাল বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব হবে না সিটিসেলকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এক সময়ের প্রভাবশালী এই মোবাইল অপারেটরটির বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর আসবে।

সূত্র জানায়, অধিকাংশ টাওয়ার বন্ধ হয়েছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে। নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়ার কারণে সিটিসেলের গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এদিকে গ্রাহকদের চাপ ও অফিস ভাড়া দিতে না পারায় দেশের অধিকাংশ গ্রাহকসেবা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ।

গ্রাহক সংখ্যার বিচারে সিটিসেল এখন মৃতপ্রায়। অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা এখন শূন্যের কোটায়, টাওয়ারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করতে পারায় সারাদেশে ৮৭৬টির মধ্যে ৭০০ বিটিএস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে অধিকাংশ গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, কর্মীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া, নতুন ট্রেড ইউনিয়নের চাপ, বিটিআরসির কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বকেয়া, বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১ হাজার কোটি টাকার ওপর ঋণসহ নানা সংকটের কারণে অপারেটরটির লেজে গোবর অবস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সিটিসেলের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি। এদিকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সিটিসেলের টাওয়ার বন্ধ হলেও এর চেয়ে বড় দেনা রয়েছে বিটিআরসির কাছে।

গত বছরের নভেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে টুজি লাইসেন্সের আওতায় তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, তরঙ্গ বরাদ্দ চার্জ বাবদ ১৯ কোটি ৭৫ লাখ, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৭ কোটি ৪৫ লাখ ও লাইসেন্স ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা। আর্থিক সংকটের কারণে এ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জানিয়েছে সিটিসেল। এজন্য একাধিকবার অর্থ পরিশোধের সময় বৃদ্ধির আবেদনও করে প্রতিষ্ঠানটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সিটিসেলের বিটিএস ও গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে আছে। ফলে দ্রুতগতিতে গ্রাহক কমছে। কমছে র‌্যাভিনিউ। সেই প্রভাব পড়ছে সিটিসেলের ৫৪৩ জন স্থায়ী কর্মীর ওপর। চলতি বছরের শুরুর মাস থেকেই বেতনে অনিয়ম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখনো তিন মাসের বেতন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। এখন নতুন বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এসব ব্যাপারে জানতে সিটিসেলের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স তাসলিম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ সিটিসেল টাওয়ারের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে সিটিসেল মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না মির্জাপুর এলাকায়। নেটওয়ার্ক না থাকায় গত দুই মাস ধরে মির্জাপুরে অপারেটরটির কয়েক হাজার গ্রাহক চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকরা জরুরি প্রয়োজনে কোনো অপারেটরের সঙ্গে কথা বলা এমনকি মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারও করতে পারছেন না।

মির্জাপুর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মির্জাপুরে সিটিসেল মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের বিদ্যুৎ বিল গত ছয় মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার টাকা। বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য মির্জাপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস সিটিসেল মোবাইলের কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধ করার পরও তারা বিল পরিশোধ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে টাওয়ারের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। মির্জাপুর উপজেলার মতো সারাদেশে প্রায় প্রতিটি থানায় একই চিত্র।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। যাত্রার সময় এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সেলফোন কোম্পানি। প্রথম থেকে সিটিসেল বাংলাদেশের একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিটির বর্তমানে ৪৫ শতাংশ মালিকানা সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি সিংটেলের আর ৫৫ শতাংশ মালিকানা দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক গ্রুপ ও ফারইস্ট টেলিকমের।

বর্তমানে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশও নেই। ২০০৭ সালে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০০৮ সালে সিটিসেলের মার্কেট শেয়ার ছিল ৩.৮৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে কিছুটা বাড়লেও ২০১০ সালে কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩১ শতাংশে। ২০১১ সালে হয় ২ দশমিক ২৬ শতাংশে আর ২০১২ সালে এসে দাঁড়ায় ২.০১ শতাংশে। ২০১৩ সালে সে মার্কেট শেয়ার ১ শতাংশের নিচে নেমে আসে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আরো অর্ধেকে নেমে আসে।

কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বলেছেন, ১৯৯৭ সালে আমি একটি সিটিসেল ফোন কিনেছি। সেটা অনেক বড় হওয়া সত্ত্বেও এখনো চালাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে সিটিসেল নেটওয়ার্কের যা অবস্থা তাতে এটা আমার জন্য অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কিছুদিন দেখে, সেটটা আমি বাদ দেবো।

আরেক গ্রাহক আইনুর নাহার জানান, আমি অনেক সখ করে ২০০৫ সালে একটি সেট কিনেছিলাম, বর্তমানে নেটওয়ার্ক প্রবলেমের কারণে ওই সেটটা আর চালাই না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!