• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার না হওয়ায় বাড়ছে শিশু ধর্ষণ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০১৬, ০১:২৯ পিএম
বিচার না হওয়ায় বাড়ছে শিশু ধর্ষণ

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণ। একের পর এক ঘটে যাচ্ছে গা শিউরে ওঠার মতো নৃশংস ঘটনা। নিজের পরিধানটা সম্পর্কেও বোঝার শক্তি হয়নি- ঘটনা পরম্পরায় এমন সব শিশুই শিকার হচ্ছে বেশি পাশবিকতার। বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্বাপর ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় বাড়ছে শিশু ধর্ষণ।

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গত ১৮ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার হয় পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যা। পরদিন ভোরে গ্রামের লোকজন একটি হলুদ ক্ষেত থেকে অজ্ঞান অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ভয়াবহ নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় যখন দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে, এরই মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর ভাটারায় ধর্ষিত হয় পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী, ১ নভেম্বর সাভারে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয় ৯ বছরের এক শিশুকে।

এমনিভাবে প্রতিদিনই নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। ঘরে কিংবা বাইরে, পরিবার কিংবা সমাজে কোথাও যেন তারা নিরাপদ নয়। দিন দিন এ চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজের চরম অবক্ষয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সামাজিক হেনস্থা ইত্যাদি কারণে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে ৮৬টি, ২০১৩ সালে ১৭৯টি, ২০১৪ সালে ১৯৯টি এবং ২০১৫ সালে ৫২১টি শিশু ধর্ষিত হয়। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশু ধর্ষণের ঘটেছে ৩২৫টি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি : শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন। তিনি বলেন, এসব শিশু মূলত দরিদ্র ও শ্রমজীবী বাবা-মায়েদের সন্তান। তাদের অনুপস্থিতিতে এসব শিশুকে দেখার কেউ থাকে না। আরেকটি গ্র“প যারা নিজেরাই কর্মজীবী তারা এবং গৃহকর্মীরা ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকছে বেশি।

তিনি আরো বলেন, অজ্ঞতার কারণে আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেকেই আদালত বা পুলিশের দোরগোড়ায় পৌঁছাচ্ছেন না। ফলে এসব অপরাধ ঘটছেই। অনেক অভিভাবকই জানেনই না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়। আর অনেকে দেখছেন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না, বাইরে মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক দেশে কিন্তু দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়।

বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা: ধর্ষণের মামলা চলাকালে বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে।

মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, জামিন অযোগ্য অপরাধ হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে অপরাধী জামিন পাবে না, আইনজীবী হিসেবে তো সেটা বলা যায় না। সুতরাং শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে যদি আলাদা সেল করা হয়, মামলার গতি তদারকি করা হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমতে পারে।’

বিচারের দীর্ঘসূত্রতা : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে, বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারক স্বল্পতা এখানে একটি সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ডিফেন্স লইয়ারের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!