• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে ৯ বিঘা জমি চেয়েছে বিজিএমইএ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৭, ২০১৬, ০৪:৪৪ পিএম
বিনামূল্যে ৯ বিঘা জমি চেয়েছে বিজিএমইএ

ঢাকা: আদালত থেকে বর্তমান ভবন ভাঙার নির্দেশ জারির পর থেকে নতুন জায়গা খুঁজছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। ইতিমধ্যে রাজধানীর উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিনামূল্যে ৯ বিঘা জমি চেয়েছে সংগঠনটি। বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের ওপর বিজিএমইএ’র ভবন অবৈধ ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে উচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য শিগগিরই আবেদন করবে বিজিএমইএ। পাশাপাশি রাজধানীর অন্য কোথাও সংগঠনের কার্যালয় স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। 

অবৈধ পন্থায় হস্তান্তর হয়েছে জমি। সেই জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দ্বিতল বেজমেন্টের ওপর গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ কমপ্লেক্স। ক্রয়-নিবন্ধন ছাড়াই ভবনটির স্পেস কিনেছেন বিজিএমইএর সদস্য পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। ভবনটি ভেঙে ফেলতে উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর এখন লগ্নি করা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে গত জুনে দেয়া আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে চলতি মাসে। রায়ের এ কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে ভবনটি। সে হিসাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ হাতিরঝিলের ভবনটি দৃশ্যমান থাকবে না। এদিকে অবৈধ ভবনের বিভিন্ন তলায় স্পেস ক্রেতাদের পক্ষ থেকে দাবি হাতে পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে অর্থ ফেরতেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। তবে এ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হবে বলে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সূত্রগুলো বলছে, রায়ের পর এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এ অবস্থায় ক্ষতি মেনে নিলেও ভবনে করা লগ্নির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছেন না তারা। রিভিউ আবেদন-পরবর্তী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএর পদক্ষেপের অপেক্ষা করছেন তারা।

জানা গেছে, রাজধানীর হাতিরঝিলে স্থাপিত বিজিএমইএ ভবনে ২ লাখ ৬৫ হাজার বর্গফুট স্পেস আছে। প্রতিটি স্পেসের মালিকানায় আছেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও পোশাক শিল্প কারখানা-সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে শিল্পকারখানা মালিকদের আধিক্যই বেশি, যার মধ্যে আছেন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান ও সাবেক নেতারা।

বিজিএমএই ভবনে আছে মোট ১৫টি তলা। এর নিচে আছে গ্রাউন্ড ফ্লোর, বেজমেন্ট ১ ও ২। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আংশিক জায়গাজুড়ে রয়েছে বিজিএমইএ অডিটোরিয়াম, বাকি স্পেসগুলোয় আছে ঢাকা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের কার্যালয়। তৃতীয় ও চতুর্থ ফ্লোর পুরোটা এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার কিছু অংশের  স্পেস বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান (অ্যালোটি) বিজিএমইএ। ১৪ ও ১৫তম তলাও পুরোটা ব্যবহার হয় বিজিএমইএর দাপ্তরিক, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন কার্যক্রমে। বাকি সব ফ্লোরের স্পেস কিনেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ৮২ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে। ৪৪ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানসহ দেশজ উৎপাদনে (জিডিপিতে) প্রায় ১৩ শতাংশ অবদান রাখছে। এমন একটি খাতে কোনো অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাঁরা এটা চান না। 

সংগঠনের নেতারা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক খাতকে সহায়তা করতে ইউডি, ইউপি, সিউ, জিএসপি ফরম ইস্যু করা এবং রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়ার কাজগুলো পরিচালনা হয় ভবন থেকে। আর এসব কাজে জড়িত প্রায় ৩৫০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই ভবনে। তাই সম্মানজনকভাবে অন্য ভবনে যেতে যৌক্তিক সময়ের জন্য তাঁরা রিভিউ আবেদন করবেন আদালতে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সহ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, ভবন সরাতে বিজিএমইএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ জন্য রাজধানীর উত্তরায় একটি জমি দেখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হলে শিগগিরই ওই জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

তবে এই ভবন ভাঙলে পোশাক খাতের বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন মোহাম্মদ নাসির। যেহেতু এটি তৈরি পোশাক খাতের একটি বড় সংগঠনের নিজস্ব ভবন।

মোহাম্মদ নাসির আরও বলেন, প্রায় দুই দশক আগে বেগুনবাড়ী খালের ওপর নির্মাণ করা বিজিএমইএ ১৪ তলাবিশিষ্ট ভবন ভাঙতে উচ্চ আদালতের দেওয়া চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে। একই সঙ্গে এই আবেদনে আমাদের নতুন ভবন নির্মাণ ও পোশাকশিল্পের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের কাছে তিন বছরের সময় চাইব।

১৪তলা মূল ভবনে এক লাখ ২০ বর্গফুটের অন্য অংশীদারদের কী হবে এই প্রশ্নে মোহাম্মদ নাসির বলেন, দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট ভবনের জায়গার মধ্যে বিজিএমইএর নিজস্ব এক লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট। এই ভবন ভাঙলে বর্তমান বাজারদর অনুসারে ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে সংগঠনটি।

তবে ভবনের অন্য অংশীদারদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভাবছে না বিজিএমইএ। কারণ এই ভবনে বেশির ভাগ ফ্লোর যারা বরাদ্দ নিয়েছে তাদের বেশির ভাগই এই খাতের সঙ্গে জড়িত। তারাও মনে করে বিজিএমইএর যে পরিস্থিতি হবে, বাকি সবার অবস্থাও একই হবে।

মোহাম্মদ নাসির জানান, পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকা দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছ থেকে দুই দশক আগে এই জমি কেনা হয়েছিল বিজিএমইএ ভবনের জন্য।

১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তত্কালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বিএনপি শাসনামলে নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!