• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির হাতছানি


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৮, ২০১৬, ০২:২১ পিএম
মিয়ানমারে বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির হাতছানি

ঢাকা: বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানিতে অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের পর এই মুহুর্তে মিয়ানমারে একটি ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল’ ক্ষমতায় রয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশও আগের তুলনায় ভালো। কিন্তু পণ্য রপ্তানিতে অপার সম্ভাবনা থাকার পরও প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। 

দুই বছর আগেও প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ছয় গুণ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬.১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। বিপরীতে মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়েছে ৯২.২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। 

কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি পুষিয়ে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো আমদানিকে ছাড়িয়ে গেছে রপ্তানি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ৩৮.১০ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৩৮.২৩ মিলিয়ন ডলার। যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বেশি সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য সহজীকরণ হলে রপ্তানি আয় কয়েক হাজার গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। গত অক্টোবর মাসে তাদের ফরেন পলিসি ঘোষণা করেছে মিয়ানমার সরকার। আর তাই মিয়ানমারে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের এটাই সবচেয়ে ভালো সময় বলেও মনে করছে ব্যবসায়ীরা। 

তবে এই মুহুর্তে বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বা সংযোগ ঘটানোকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নৌ প্রটোকল এবং ব্যাংকিং চ্যানেল না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাইলেও মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে পারছেন না। সরকার আগামী ২০২০ সাল নাগাদ মিয়ানমারে রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার যে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তাও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিয়ানমার প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ একটি দেশ। তাই সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সরাসরি বিজনেস কারেন্সি চালু করতে হবে। গত বছর মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরে আসা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। 

১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তির পর থেকেই শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি। সেই হিসাবে প্রতি বছরই উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে। কিন্তু যে হারে বাণিজ্য বাড়ার কথা, সে হারে বাড়ছে না। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএমসিসিআই) সভাপতি এসএম নুরুল হক বলেন, কোনো ব্যবসায়ী চাইলেই মিয়ানমারে পণ্য লেনদেনে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারে না। কারণ বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকের সঙ্গে তাদের চুক্তি নেই। আমরা এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে একাধিকবার জানিয়েছি। ইয়াঙ্গুন এবং সিটওয়েতে একটি করে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা খোলারও দাবি জানিয়েছি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। 

নুরুল হক আরও বলেন, আগে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাইলে একজন ব্যবসায়ীকে অনেক কাঠখোড় পোহাতে হত। সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে শুধু মিয়ানমার থেকে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় এনে দেবে ব্যবসায়ীরা। 

প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে বর্তমানে পণ্য রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত একমাত্র রুট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন। সমুদ্রপথে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে কমপক্ষে ৫ দিন। আর যদি টেকনাফের পার্শ্ববর্তী বন্দর সিটওয়ে বা সাবেক আকিয়াব অঞ্চলে কোনো পণ্য পাঠাতে হয় সে ক্ষেত্রে ইয়াঙ্গুন থেকে সড়কপথে আরও প্রায় ৩২ ঘণ্টার পথ। অথচ শুধু প্রতিবেশি দেশ দুটির মধ্যে নৌ প্রটোকল চুক্তি হয়ে গেলে ছয় থেকে আট দিনের এই দূরত্ব নেমে আসবে মাত্র ৮ ঘণ্টায়। 

এ প্রসঙ্গে বিএমসিসিআই সভাপতি এসএম নুরুল হক বলেন, নৌ প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর হলে স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটবে। আমরা দুই দেশের সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দেয়া আছে। 

চট্টগ্রামের সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ নৌ বন্দর, টেকনাফ এবং উত্তরবঙ্গসহ পাঁচটি নৌ বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দর হয়ে এক হাজার টনের জাহাজ চলাচল করবে। স্বল্প দূরত্ব হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগ লুফে নেবে।

জানা গেছে, নভেম্বরের ১০-১১ তারিখে ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উদ্যোগে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব। আর মিয়ানমারের পক্ষে উপমন্ত্রী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নেতৃত্বে থাকবেন। সভায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন সচিব উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা গেছে। 

ওই সভার এজেন্ডায় নৌ প্রটোকল এবং ব্যাংকিং সুবিধা চালুর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আর সভায় নৌ প্রটোকল ও ব্যাংক চ্যানেল চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে উভয় দেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিএমসিসিআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিয়ানমারে রপ্তানির সম্ভাবনায় খাতটি হচ্ছে তৈরি পোশাক ও ওষুধ। মিয়ানমারে রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে সিমেন্ট, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য, পাট ও পাট জাতীয় পণ্য, চামড়া, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, টি-শার্ট, জুতা, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, প্রসাধন সামগ্রী ইত্যাদি। আর বেশি পণ্য আমদানি হয় কাঠ। এরপরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মাছ। 

অন্যদিকে মিয়ানমারের ওষুধশিল্প মূলত আমদানি নির্ভর। প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের ওষুধের মার্কেট রয়েছে সেখানে। মূলত থাইল্যান্ড, চীন থেকে তাদের এই ওষুধ আসে। বাংলাদেশ যেহেতু ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ; এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের একাধিক দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়, সেখানে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারে ওষুধ রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!