• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টার্গেট এখন নির্বাচন


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৬, ১০:৫৭ পিএম
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টার্গেট এখন নির্বাচন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেই এখন যাবতীয় সাংগঠনিক পরিকল্পনায় ব্যস্ত দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এ নির্বাচন সামনে রেখেই চলছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন সফল করার প্রস্তুতি।

আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে জানার পর আওয়ামী লীগ এখনই নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ সারতে চায়। আসন্ন সম্মেলনে দলের যে ঘোষণাপত্র পেশ করা হবে, তার আলোকেই প্রস্তুত হবে দলটির নির্বাচনী ইশতেহার।
অন্যদিকে বিএনপি এরই মধ্যে দলের সম্মেলন শেষ করেছে। এখন দলটির প্রধান লক্ষ্য তৃণমূল পুনর্গঠন। দুই দলের নির্বাচনী পরিকল্পনাবিষয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে সোনালীনিউজ পাঠকদের জন্য-     

সম্মেলনে নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিতে পারে আ. লীগ : আসন্ন সম্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চায় আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে দলের যে ঘোষণাপত্র পেশ করা হবে, তার আলোকেই প্রস্তুত হবে দলটির নির্বাচনী ইশতেহার। সম্মেলনের সবকিছুই হবে পরবর্তী নির্বাচনের মহড়া।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রমজানের ঈদের আগেই একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতির ডাক দিয়েছেন। তখন থেকেই আমরা শুরু করেছি। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হবে।’

দলটির তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সংবাদ প্রতিদিনকে জানান, আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সব কিছুতেই থাকবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির ছাপ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ‘দিনবদলের সনদ’ স্লোগান দিয়ে ভিশন-২০২১ ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা দলটির ১৯তম সম্মেলনের ঘোষণাপত্র থেকে নেয়া হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে ভিশন-২০৪১ চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত ঘোষণায় থাকবে আকর্ষণীয় স্লোগান। তবে এখনো ওই ঘোষণা চূড়ান্ত হয়নি। ওই নেতারা বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা তৈরির জন্যই সম্মেলন বারবার পেছানো হয়েছে। মূলত দলটির সম্মেলনটি হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মহড়া। তিনবার পেছানোর পর আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল-আলম লেনিন বলেন, ‘২০তম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যে ঘোষণাপত্র পেশ করা হবে, তার আলোকেই আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রস্তুত করবে। গত নির্বাচনের ইশতেহারেও তা-ই হয়েছিল।’

এদিকে বিগত জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিএনপি। তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা নির্বাচন ভণ্ডুল করতে পারেনি। পাল্টা হরতাল-বোমাবাজির মতো কর্মসূচি দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে হলেও এটা নিয়ে কোনো দল থেকেই উচ্চবাচ্য হবে না। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জেনেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির যে আপত্তি রয়েছে, সে সম্পর্কে সরকার সচেতন। আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন সবার মতামত নিয়েই গঠন করা হবে বলে তারা জানান।

ওই পাঁচজন নেতার মতে, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের স্বার্থে অনেক ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত। তবে বর্তমান সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে কোনো ছাড় তারা দেবেন না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘যে যেভাবেই কথা বলুক না কেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে।’

নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানোর উদ্যোগ বিএনপির : আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, পবিত্র হজ পালন শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অফিস করবেন। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে যত দ্রুত সম্ভব তিনি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করবেন। সেই সঙ্গে তিনি ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও ঘোষণা করবেন। এরপর তিনি মাঠ পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ শুরু করবেন। এসব  বিষয়ে সৌদি আরবে বিএনপি চেয়ারপারন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে।  

বেগম জিয়ার একান্ত সচিব এবং গৃহকর্মীও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে গেছেন। এবারের হজে লন্ডন থেকে তার বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান এবং নাতনি জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌদি আরবে যোগ দিয়েছেন।

এর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব জেলা কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলছেন, এবার নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে না। সময়-সুযোগমতো সব জেলা কমিটি দ্রুত পুনর্গঠন করতে চান তারা।

গত ১৯ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে বিএনপি। এর সাড়ে পাঁচ মাস পর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটিও একই দিন ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে মাঠ পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

গত ২৯ আগস্ট ঢাকা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করা হয়। সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুকে সভাপতি এবং খন্দকার আবু আশফাককে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৬ সদস্যের ওই কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ জেড এম রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক করে দিনাজপুর জেলা কমিটিও একই দিন ঘোষণা করা হয়। তবে এই দুই জেলায় সম্মেলন হয়নি।

ঈদের পর মাঠ পর্যায়ে দল গোছানোর দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চায় বিএনপি। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন করে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। ঈদের পর উপজেলা, জেলা পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের মূল কাজ শুরু হবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই বছরের ৪ ফেব্র“য়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দল গুছিয়ে তারা আবার আন্দোলন শুরু করবেন। তার ওই বক্তব্যের দুই মাস পর এপ্রিলে পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নওগাঁ, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম উত্তর, ময়মনসিংহ উত্তরসহ বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। প্রথম দফায় বিএনপির মোট ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১০-১২টির কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়।

দল গোছানোর কাজ শেষ না করেই গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে আবার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এতে জেলা কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া থমকে যায়। আন্দোলন ও আন্দোলন ঘিরে নেতাকর্মীদের নামে মামলা-গ্রেফতার মিলিয়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় গত বছরের আগস্টে আবারও জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় দলটি। ৬ আগস্ট চিঠি দিয়ে জেলা পর্যায়ের সব কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনের ডামাডোলে বিএনপির জেলা কমিটি গোছানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আগেই সম্মেলনের মাধ্যমে সব জেলার কমিটি করার কথা।

তবে গত মার্চে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে দ্বিতীয় দফার উদ্যোগে রাঙামাটি, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সৈয়দপুর, সিলেট, ঝিনাইদহসহ ১৪টি জেলার কমিটি পুনর্গঠন করতে পেরেছিল বিএনপি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!