• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাদেরের সুবচনে সুবাতাস!


সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর অক্টোবর ৩১, ২০১৬, ১০:২২ পিএম
কাদেরের সুবচনে সুবাতাস!

ঢাকা: রাজনীতিতে সুবচনের বড় অভাব। নেতাদের বক্তব্যে বজ্রকণ্ঠের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা উপযোগিতা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। সেই সঙ্গে কি সংসদে, কি সংসদের বাইরে নেতাদের বাক্যবাণ কখনও সীমা লঙ্ঘনও করে যায়। কখনও আবার ‘সেন্স অব হিউমার’ বলে চালিয়ে দেয়া হয় নোংরা উপহাসকে।

এসবই করা হয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিংবা তাদের সম্পর্কে নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে। আর এসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভুল-ত্রুটিগুলো ঢাকা সহজ হয়।

তবে এক্ষেত্রে একজন নেতাই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে চলেছেন। তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মেধাবী ও ছাত্রলীগের এই সাবেক সভাপতি ব্যক্তিজীবনে একজন লেখকও।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ও পরে রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিত্তিক চিন্তা-চেতনা আর বক্তৃতা-বিবৃতির জন্য তিনি সবার নজর কাড়েন। মন্ত্রণালয়ের শীতল বাতাসে সময় কাটানোর চেয়ে মাঠে ঘাটে চষে বেড়ানোতে তিনি সবার প্রিয়ও হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের স্মরণীয় দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন। এ কারণেই তাকে ‘ভারতীয় সিনেমা ফাটাকেস্ট’-এর প্রধান চরিত্র ‘ফাটাকেস্ট’ এর মর্যাদা দেয়া হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে ওবায়দুল কাদের আরো কঠোর ভূমিকা নেয়া ও রাজনৈতিক শুদ্ধতা আনা চেষ্টা করছেন বলে তার বক্তব্য আর কথার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এমন প্রমাণ পাওয়া গেল সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে। জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে।

সভামঞ্চে ওঠার পথে সাধারণ সম্পাদকের জন্য ফুল বিছানো হয়। এসময় তিনি বলেন, ‘আর ফুল নয়, কথা নয়। সবাই কাজে নেমে পড়ুন। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন।’ দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদের উদ্দেশ করে বললেন, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন, মাঝেমধ্যে করেন, কিছু কিছু অপকর্ম করেছেন—প্লিজ, সংশোধন হোন। নতুবা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘কতিপয় নেতা-কর্মীর ও জনপ্রতিনিধির জন্য নেত্রীর অর্জন ম্লান করতে দেব না। সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক—এটা হতে দেব না।’

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের শুরু থেকেই অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা চালু হয়ে ওঠে। তিনি বক্তব্য দিতে ডায়াসে উঠলে অনুসারীদের একটি অংশ তার পেছনে অবস্থান নেন। বক্তব্যের শেষের দিকে তিনি সবাইকে তাড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে মঞ্চ থেকেই নামিয়ে দেন।

ওই সময় ওবায়দুল কাদের অপ্রীতিকর কথা বলেন, ‘টিভিতে নিজের চেহারা দেখানোর জন্য এভাবে দাঁড়িয়েছে। টিভিতে দেখা গেলে এলাকায় গিয়ে বলবে, আমাকে কি দেখেছ? এটা চলবে না। একটা ডিসিপ্লিনে আসতে হবে।’

দলের জাতীয় সম্মেলনের পর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বিষয় উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হতাশ হবেন না। কমিটমেন্ট নিয়ে লেগে থাকলে পুরস্কৃত হবেন। এর বড় প্রমাণ আমি ওবায়দুল কাদের।

রাজনীতিকরা সমাজ-রাষ্ট্রের কল্যাণ করতে গিয়ে উদ্ভুত জটিলতা এড়াতে কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন। অনেক বাঁকা পথেও হাঁটেন। অনেক সময় ব্যক্তির চেয়ে দল বড় এমন দর্শনও হাজির করেন। কিন্তু রাজনীতির সেইসব কৌশল এমন হওয়া উচিত হবে না, যা মানুষের কল্যাণকে উপেক্ষা করে। ওবায়দুল কাদেরের সুবচন দলের নেতাকর্মীরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করলে রাজনীতিতে সুবাত আসতে বেশি বিলম্ব হবে না।   

সোনালীনিউজ/এমএন 

Wordbridge School
Link copied!