• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর্য অপসারণ: বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৬, ২০১৭, ১২:২২ পিএম
ভাস্কর্য অপসারণ: বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ

ঢাকা : দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে বের করা মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের মাজার গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। ব্যারিকেড ভেঙে তারা সামনে এগুতে চাইলে পুলিশ জল কামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল সারাদেশে কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট একটি সংরক্ষিত এলাকা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ।’ 

তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছিল। সকাল থেকেই আমরা তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছি, দফায় দফায় কথাও বলেছি। কিন্তু তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে মাজারগেটের প্রধান সড়কে থাকা ব্যারিকেড ভেঙে এগুতে চাইলে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।’

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ১১টায় ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে শ্রমিকরা। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এটি সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের উত্তরপাশে অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনরায় স্থাপন করা হবে।

ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার কাজের তদারকি করেন ভাস্কর মৃণাল হক। এ সময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তবে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে রাতেই সুপ্রিমকোর্টের মূল ফটকের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন গণজাগরণ মঞ্চ এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। ভাস্কর্য সরানো নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে আপোষের অভিযোগ করেন তারা।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সুপ্রিমকোর্টের সামনে স্থাপন করা হয় এ ভাস্কর্যটি। গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। যদিও ভাস্কর মৃণাল হকের দাবি, এটা গ্রিক দেবী নয়, শাড়ি-চুড়ি পরানো বাঙালি নারীর অবয়ব।

স্থাপনের পর থেকে এ নিয়ে নানা মহলে চলতে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম রোজার আগে ভাস্কর্যটি সরানোর আল্টিমেটামও দেয়।

এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তা সম্পূর্ণভাবে অপসারণের কাজ শেষ হয়। অপসারণের কাজ তদারকি করেন ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক। পরে ভাস্কর্যটি পিক-আপ ভ্যানে করে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের পেছনে পানির পাম্পের সামনে রাখা হয়।

ভাস্কর্যটি সরানোকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি সরকারের নয়, এটি আদালতের এখতিয়ার বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!