হিন্দু মেয়ের বিয়েতে ইউপি মেম্বারের লঙ্কাকান্ড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০, ১১:৫৬ এএম

ঢাকা : দিনটা ছিলো রোববার। দিবাগত গভীর রাতে শুভ লগ্ন। আর সেই শুভ লগ্নে অতি ধুমধামের সাথে বিশাল আয়োজনে বিবাহ সম্পন্ন হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের অঞ্জলী ঘোষের ছোট মেয়ে কাঞ্চনা রানী ঘোষের। কাঞ্চনা রানী ওই এলাকার ২০১৬ সালে পিতা হারানো এক অসহায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

কিন্তু সেই বিয়েতে এ কি কান্ড করলেন ওই ইউনিয়নের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. তাসেম আলী। না ভয় পাবেন না। এ কোন ছোটখাটো কান্ড নয় এক্কেবারে লঙ্কা কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি। কাঞ্চনার মতো এক অসহায় হিন্দু মেয়ের বিয়ের যাবতীয় খরচ নিজে বহন করেছেন তিনি। ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে দুই ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা খাবার আয়োজন এবং হিন্দু রীতিনীতি অনুযায়ী পিতা হারানো মেয়ের অনুষ্ঠিত বিয়েতে অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ বহন করা ছাড়াও বরকে মোটরসাইকেল, বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র প্রদাণ করাসহ কনে কাঞ্চনাকে তিন ভরি স্বর্ণের অলংকারও উপহার দিয়েছেন প্যানেল চেয়ারম্যান তাসেম আলী।

শুধু কি তাই, কাঞ্চনার বাবা মারা যাবার পর থেকেই তার লেখাপড়ার খরচ এবং ওই পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার চালাচ্ছেন তিনি। আর তাই মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন তাসেম আলী।

বিয়ের এমন মানবিক জাঁকজমক অনুষ্ঠানে গোবরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মান্নু মিয়া, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত থেকে বর-কনেকে আশির্বাদ করেন।

এবিষয়ে কনে কাঞ্চনা রানী ঘোষের মা অঞ্জলী ঘোষ বলেন, ২০১৬ সালে কাঞ্চনার পিতাকে হারিয়ে দুই মেয়ে কনিকা রানী ঘোষ ও কাঞ্চনা রানী ঘোষকে নিয়ে কূল খুঁজতে না খুঁজতেই বড় মেয়ে কনিকা রানী ঘোষকে বখাটে মালেক প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। এরপর স্বামী ও মেয়েকে হারিয়ে যখন দিশেহারা ঠিক সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ান তাসেম মেম্বার ও তার সহধর্মিনী। একমাত্র মেয়ে
কাঞ্চনার লেখাপড়াসহ পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব নেন তারা। আর আজ সেই তাসেম মেম্বারের সার্বিক সহযোগিতায় ধুমধামের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মেয়ের বাবা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন আয়োজনে মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম না। এভাবেই তাদের সহযোগিতায় আমার পরিবার আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।

এবিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান তাসেম আলীর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়ে কাঞ্চনা রানী ঘোষের বিয়ে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কাঞ্চনার পিতা পরলোকগমন করলে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। আর সেই সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়ে কাঞ্চনাসহ তাদের পরিবারের দায়িত্ব বহন করে আসছি। এ কাজে ধর্ম কোন সময় আমাকে পিছপা হতে দেয়নি। আমি মানুষের কল্যাণে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারটিকে সাধ্যমত সহযোগিতা করেছি। প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচে মেয়ে কাঞ্চনার বিয়ে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সামনের দিনেও আমি পরিবারটি ও মেয়ে কাঞ্চনার পাশে থাকবো। আর এই কাজে সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন আমার সহধর্মিনী ইসরাত জাহান।

সোনালীনিউজ/এএস