শিমুলিয়ায় আরেকটি ফেরি ঘাট পদ্মায় বিলীন, ফেরি চলাচল বন্ধ

  • মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২০, ০২:৩২ পিএম

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং শিমুলিয়াঘাট এলাকায় আবারো পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ৪নং ফেরী ঘাটটি।

রাত আড়ইটার দিকে ভাঙন শুরু হলে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৪নং ফেরী ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এদিকে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল ৭টা থেকে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরিসহ সকল ধরণের নৌযান চলাচলা বন্ধ করে দিয়েছে ঘাট কতৃপক্ষ।

এ নিয়ে ৯দিনের ব্যবধানে দুই দফা ভাঙনে শিমুলিয়ার চারটি ফেরিঘাটের মধ্য দুটি ঘাট বিলীন হলো। এর আগে গত ২৮ই জুলাই ভেঙে যায় ৩নং রোরো ফেরি ঘাটটি।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক সাফায়েত আহমেদ জানান, রাত আড়াইটার দিকে ভাঙন শুরু হয়। এরমধ্যেই ৪নং ফেরিঘাটটিসহ অ্যাপ্রোচ সড়ক ও ঘাটের কয়েকশ ফুট জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সকাল ৭টায় সর্বশেষ ফেরীটি কাঠালবাড়ির উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। বর্তমানে ফেরিসহ সকল নৌযান বন্ধ রয়েছে। ভাঙন ২নং ভিআইপি ঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।ঘাটে পারাপারের জন্য দুই শতাধিক গাড়ী রয়েছে।

গোপালগঞ্জে বন্যার পানি বাড়ায় মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন, আতঙ্কে বাসিন্দরা : গোপালগঞ্জে বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে মধুমতি নদী ও মধুমিত বিলরুট চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মধুমতি নদীর মানিকদাহ, জালালাবাদ এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মধুমতি নদীতে পানি এখনো বিপদ সীমার ৩৮ সেন্টিমিটার এবং মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল (৪ আগষ্ট) যা যথাক্রমে বিপদ সীমার ৪০ ও ১০ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।

এদিকে, গোপালগঞ্জে বন্যার পানিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, মুকসুদপুর ও কোটালীপাড়া উপজেলার অন্তত ২৫ টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে । এতে তিন সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার্ত ৫শতাধিক পরিবার উঁচু এলাকার বিভিন্ন স্কুলে ও রাস্তার পাশে কুড়ে ঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকার ছোট বড় সহস্রাধিক পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দূর্গতদের সাহায্যের জন্য ৩শ’ মেট্রিক টন চাল এবং শিশু, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবারের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মেঘনা নদীর পানি বাড়ায় চাঁদপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : মেঘনা নদীর পানির বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন অঞ্চল, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো ও হাইমচর উপজেলায় সেচ প্রকল্পের বাইরের এলাকাগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চরাঞ্চলের লোকজন কোন উপায় না পেয়ে মাচা বেঁধে অবস্থান নিয়েছে।

বুধবার বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লঞ্চঘাট, হরিণা ফেরিঘাট, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, নিউ ট্রাক রোড, আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক, কোড়ালিয়া রোড, যুমনা রোড, মাদ্রাসা রোড, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ সড়ক, হাফেজিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মৈশাবাড়ী রয়েজ রোড, নিতাইগঞ্জ সড়ক, মধ্য শ্রীরামদী, পশ্চিম শ্রীরামদী, সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন, ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন, হানারচর ইউনিয়ন, চান্দ্রা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম খান জানান, ইউনিয়নের ৪ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। চরফতেজংপুর ও ইব্রাহীমপুর গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি।

সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়েই পুরো ইউনিয়ন। সেখানকার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে চিরাচ্চর, রায়েরচর, গোয়ালনগর, বরিয়ারচর, মুগাদি, বাঁশগাড়ি, চরসুরেশ এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাড়িতে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। লোকজন এখন মাছা বেধে অবস্থান করছে। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টিও পানিতে তলিয়ে গেছে।

সদরের চান্দ্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম বলেন, তাদের বাড়ি ঘর পানির নিচে। সড়কগুলোও তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে থাকাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গবাদি পশুগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। পুকুর ও মৎস্য খামারগুলোও তলিয়েগেছে।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটের লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার জানান, বিকেল থেকেই লঞ্চঘাটে পানি প্রবেশ করে তলিয়েগেছে। যার কারণে যাত্রীদের উঠা নামায় অনেক কষ্ট হচ্ছে।

হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামের ফারুক গাজী, দুলাল মিয়া, ইয়াছিন মিজি, ছালে আহমদ জানান, বিকেল থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি বাড়ি ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের মধ্যে এখন তারা পানিবন্দি। তাদের গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পানির মধ্যে রয়েছে।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী জানান, উপজেলার ডেলেরবাজার থেকে শুরু করে চরভৈরবী পর্যন্ত সড়কের মহজমপুর ও পুরাতন হাইমচর সড়কের দু’টি ব্রিজের নীচ দিয়ে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে করে মহজমপুর, চরকৃষ্ণপুর, নয়ানী, লামচরী, দক্ষিণ চরভৈরবী, গাজীনগর, নতুন বাজারসহ আশপাশেল এলাকার বাড়িঘর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তার উপরে দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কয়েক এলাকায় বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার রাত সাড়ে ৮টায় জানান, গত কয়েকদিন মেঘনা নদীর পানি ছিলো বিপৎসীমার ৫০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার। তা আজকে বেড়ে হয়েছে ৭৯ সেন্টিমিটার। যার কারণে আজ বিকাল ৫টা থেকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর শহর, সদর ও হাইমচর উপজেলায় বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হাইমচর উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মহজমপুর ও পুরাতন হাইমচর এলাকায় দু’টি ব্রিজের নীচ দিয়ে ভেঙে পানি লোকায়ে প্রবেশ করেছে। যার কারণে সেচ প্রকল্প এখন হুমকির মুখে। আমরা ভাঙন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই