শ্রমিক সংকটে বিপাকে কৃষক  

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি     | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০৭:০৭ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সর্বত্র মাঠে মাঠে সোনালী ধানে সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে দিকে চোখ যায় পাকা আর পা‍কা ধান। ফসলের মাঠ জুড়ে যেন ইরি বোরো ধানের গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার সর্বত্র ধান কাটা শুরু হয়েছে। রোধ বৃষ্টি ভিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জমিতে আবাদ করা ধান এখন ঘরে তুলতে পারবে কি না কৃষকদের মাঝে এখন নানা শঙ্কা কাজ করছে। কারণ উপজেলার সর্বত্র বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় কৃষি শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শ্রমিক সংকটের কারনে অনেকেই পাকা ধান কেটে গোলায় তুলতে পারছেন না।

ফলে অনেক জমির পাকা ধান মাঠেই ঝড়ে পড়ছে। তাছাড়া শ্রমিক সংকটে মজুরি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টির আশঙ্কায় এখন আকাশে মেঘ দেখলেই সোনালি পাকা ধান নিয়ে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তবে এখন পযর্ন্ত ফসলের কোন বিপর্যয় ঘটেনি। এমৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যু ও। সরকার করোনা মহামারি ঠেকাতে সারা দেশে লকডাউন আওতায় নিয়ে এসেছেন। সরকারের নির্দেশিত সব নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তারা মাঠে নেমে কাজ করছেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ট্রেনসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতে পারছেনা। ফলে কৃষকরা পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ইরি বোরো মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ মৌস‍ুমে ইরি বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, খড়মপুর, দূর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সোনালী পাকা ধানের সমারোহ হয়ে আছে। ইতিমধ্যে জমিতে ধান কাটা শুরু হলে ও করোনা আতঙ্কে শ্রমিক সংকট থাকায় স্থানীয় কৃষকরা এক প্রকার দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

তবে এ মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি । কৃষকরা জানায়, এ মৌসুমে সঠিক সময়ে জমিতে চারা রোপন,নিবিড় বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ, সারসহ পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে কৃষি অফিসের সার্বিক তদারকি ছিল দৃশ্যমান। তারা ধান জমিতে কঞ্চি ও গাছের ডাল পুতে পাখি দিয়ে পোকা মাকড় দমনে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করে। এতে রোগ বালায়ের তেমন প্রকোপ দেখা না যাওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।

পৌর শহরের বনগজ এলাকার কৃষক মো. আবরু মিয়া বলেন, গত বছর এই সময়ে লকডাউন থাকায় ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। অনেক কষ্টে ধান কাটতে হয়েছে। এবার ও একই অবস্থায় পড়ে আছি। জমিতে ধান পেকে আছে শ্রমিকের কারনে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছিনা।


 
কৃষক জমির খান বলেন, লকডাউনের কারনে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এলাকার কৃষকরা গ্রুপ করে একজন আরেক জনের জমির ধান কাটছেন। এতে করে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এদিকে আকাশের যে অবস্থা পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় আছি।

কৃষক আলম বলেন সময় মতো পানি, বীজ, সার পাওয়ায় ও সঠিক ভাবে জমির পরিচর্যা করা হয়। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ধান কাটা হবে। কিন্তু শ্রমিক সংকট থাকায় সময়মতো ধান কাটতে পারব কি না জানিনা। কারণ গত বছর শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে না পাড়ায় হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে জমির পাকা ধান পড়ে গিয়ে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে।

কৃষক মো: নাজিম উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান ৮ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়। বেশীভাগ জমির ধান পেকে গেলে ও শ্রমিক সংকটে ধান কাটা যাচ্ছে না। যেখানে ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি ছিল ৩৫০ টাকা ছিল এখন ৫০০ টাকায় ও পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, রোধ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে এমৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। ইতিমধ্যে ধান কাটা ৪বিঘা জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানায়। বাকী জমিগুলোর ধান কাটতে আরো ৫-৭ দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন জমির দিকে তাকালে ধান গাছ দেখে মন জুড়িয়ে যায়।

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, এ উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুল থাকলে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে লকডাউনে কৃষি শ্রমিকদের পরিবহনে চলাচলে কোন প্রকার বাধানেই। তারা চাইলে কাজের জন্য যে কোন জায়গায় যেতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই