“আমার আর বিদেশ থেকে ফেরার উপায় নেই। আমার ফোন বন্ধ পেলে ভেবে নিও আমি মারা গেছি।” স্ত্রীর সঙ্গে এটাই ছিল রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলামের (৪৭) শেষ কথা। রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর গত ৮ অক্টোবর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয় পরিবারকে। খবর পেয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে অবসরে যাওয়ার পর তিনি রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় লোকসান গুনে আর্থিক সংকটে পড়েন। পরে স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাঁকে রাশিয়ার এক শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভন দেখান।
স্ত্রী আইরিন আক্তার নানা উপায়ে স্বামীকে নিরুৎসাহিত করলেও নজরুল বলেন, সেখানে ভালো বেতন পাওয়া যাবে, সংসারের অবস্থাও বদলাবে। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি রাশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাঁকে এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। পরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। তখনও নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতেন নজরুল।
গত ৩০ এপ্রিল ছিল পরিবারের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা। সেদিন স্ত্রীকে ফোনে বলেন, ‘আমি ব্যাংকে যাচ্ছি টাকা পাঠাতে।’ কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে জানান, ‘আমার আর টাকা পাঠানো হলো না, আমাকে দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ পেয়ে থাকো, বুঝবে আমি আর বেঁচে নেই।’
এরপর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ। বহু খোঁজখবরের পর অবশেষে সাত মাস পর নিশ্চিত খবর পেল পরিবার— নজরুল আর বেঁচে নেই।
স্ত্রী আইরিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “চার মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কিভাবে বাঁচব? আমার শুধু একটাই চাওয়া- সরকারের কাছে আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। আমি শেষবার একবার তাঁকে দেখতে চাই।”
নজরুলের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন, “স্থানীয় ফরিদ দালাল আমার ভাইকে রাশিয়া পাঠিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, না যেতে। কিন্তু সে বলত, নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করছে। এখন শুনছি, সে মারা গেছে।”
অভিযুক্ত ফরিদ অবশ্য দায় অস্বীকার করে বলেন, “আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। সে বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে গেছে, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে।”
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক বলেন, “বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অফিসিয়ালি কিছু পাইনি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
এসএইচ