নড়াইলে স্ত্রী নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগ এনে কালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসানুল কবিরের বিরুদ্ধে আমলী আদালতে নালিশি দরখাস্ত দিয়েছেন তার স্ত্রী সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি। তবে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি মানসিক ভাবে ব্লাকমেইল করে তাকে নিঃস্ব করার পর সর্বস্বান্ত করতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন তারই স্ত্রী বৃষ্টি।
রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর জবানবন্দি শেষে নালিশি দরখাস্তটি আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসান পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতের একটি বিশ্বস্ত ও গ্রহনযোগ্য সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে দায়েরকৃত নালিশি দরখাস্তে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী বৃষ্টি অভিযোগ করেন, গত ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালিয়া পৌরসভার রেস্ট হাউসের তৃতীয় তলার একটি গেস্ট রুমে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী বৃষ্টি ও তার কন্যা সন্তান নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এসময় ওই রেস্ট হাউজেই অবস্থান করছিলেন পুলিশ কর্মকর্তার শ্বশুর সহ আরও এক আত্মীয়। ২৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ না করায় বৃষ্টিকে নির্মম ভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন তার পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী। আর বৃষ্টির বাবা ও খালু বৃষ্টিকে মারধরের সময় ঠেকানোর চেষ্টা করেন।
আরও বলা হয়, তৎকালীন ২০০৮ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানায় উপপরিদর্শক(এস আই) হিসাবে কর্মরত ছিলেন বগুড়া জেলার সন্তান মো. হাসানুল কবির। ওই বছরের ৬ এপ্রিল দুই লাখ টাকা দেনমোহরে জয়পুরহাটের সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টির সাথে ওই এলাকায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা হাসানের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তখন হাসানের চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টির পিতা পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ ও উপঢৌকন প্রদান করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, হাসানুল কবির র্যাবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে এক নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতেন তিনি। প্রায় ছয় মাস আগে প্রাইভেটকার কেনার কথা বলে ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা হাসান। বৃষ্টি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। চলতি বছরে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কালিয়া থানায় যোগদানের পর বৃষ্টি তার কন্যাদ্বয়কে নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে কালিয়াতে চলে আসেন ২৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ও যৌতুকের দাবিতে মারধর করে পৌরসভার গেস্ট হাউজে বৃষ্টি ও তার পরিবারকে রেখে যান পুলিশ কর্মকর্তা হাসান। পরের মাসের ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই গেস্ট হাউজে যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীকে আবারও মারধর করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসকল অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা হাসানকে অভিযুক্ত করে থানায় প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বৃষ্টি বলে নালিশি দরখাস্তে দাবি করেন।
পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সাদিয়া কানিজ সিদ্দিকা বৃষ্টি মুঠোফোনে বলেন, আমার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামীর সম্মান আর সন্তানদের কথা ভেবে সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করেছি। সব অপরাধ মাফ করেও সংসার করার চেষ্টা করেছি। গত এক বছর ধরে সন্তানদের কোনো ভরনপোষণ দেয় না সে। তবুও আমি একসাথে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবশেষে কোনো পথ না পেয়ে ন্যায় বিচার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
এদিকে কালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসানুল কবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবার আমাকে মানসিক ভাবে ব্লাকমেইল করে চতুরতার সাথে আমার থেকে প্রায় বর্তমান মূল্যের প্রায় দুই কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। তদন্ত হলে আমি সব প্রমাণ দিতে প্রস্তুত। পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
পুলিশ কর্মকর্তা হাসানুল আরও বলেন, সংসার সবই ঠিক ছিলো। ২০১৯-২০ সালে এফডিআর এ কিছু টাকা স্ত্রীর নামে দেই। ২০২১ সালে আমার স্ত্রী ও তার পরিবারের চাপে আমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাকা বাড়ি, বসত ভিটা সহ ফসলি জমি মোট ৩৫ শতক লিখে দেই। সর্বমোট ৫৫ শতক জমি ও ১০ লাখ টাকার এফডির তার নামে দেয়া হয়, যার বর্তমান বাজার মূল্য হবে প্রায় ২ কোটি টাকা। ওগুলো লিখে দেয়ার পর আমি অনেকটা পরিবারের কাছে অতিথির মতো হয়ে গিয়েছি। প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ দিতো, তবুও মেয়েদের কথা চিন্তা করে চুপ করে সহ্য করছি।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব ই তো নিছে এবার শেষ একটু সম্বল আছে সেটা নেয়ার জন্য বৃষ্টি ও তার পরিবার ওঠে পড়ে লাগছে। আর আমি সেটা দিতেও চাইনা। গত মাসের ২২ তারিখ ডাকযোগে বৃষ্টিকে তালাক দেয়ার কাগজ পাঠিয়েছি। সেটা পেয়েই হয়তো এখন মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট গল্প দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হযেছেন। আমিও চাই সুষ্ঠ তদন্ত হোক, যেনো আমি যে নির্দোষ সেটা অন্তত প্রমান করার সুযোগ পাবো।
জানা যায়, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো. হাসানুল কবির র্যাবের প্রেষণ শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নড়াইলে যোগদান করেন৷ পরে এ বছরের এপ্রিলের ২২ তারিখ জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে কালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এম