আজ বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস, ফজরের আজান ছিল হামলার সংকেত

  • বরগুনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:০৯ এএম

আজ ৩ ডিসেম্বর। বরগুনার ইতিহাসে স্মরণীয় এক দিন। উত্তাল একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত হয় বরগুনাবাসী। এই দিন শত্রুর ওপর অভিযান চালাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফজরের আজানকে সংকেত কোড হিসেবে ব্যবহার করে হানাদার বাহিনী ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্ত করে জাতীয় পতাকা টানানো হয় বরগুনায়। 

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বরগুনার মুক্তিকামী দামাল সন্তানরা রাইফেল, বন্দুক ও বাঁশের লাঠি নিয়ে জেলার বিভিন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির মধ্যেই ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় তৎকালীন বরগুনা মহকুমার সাবেক জেলা পটুয়াখালী দখল করে।  তার একমাস পর ২৬ মে পাকিস্তানি সেনা ক্যাপ্টেন শাফায়াতের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী  বরগুনায় আসে ধরপাকর ও তান্ডব চালাতে থাকে। এসময় বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং বরগুনা ছাড়ে। এরপর  ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদেরকে জেলা কারাগারের দক্ষিণ পাশে গণকবর দেওয়া হয়। বরগুনায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ না হলেও তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল বরগুনাবাসী। মা বোনদের সম্ভ্রমহানি করা হয়। লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালিদের ঘর বাড়িতে। তবে হানাদার বাহিনীর চেয়েও বেশি ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।

বরগুনার তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা আধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য এ সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে তারা বুকাবুনিয়ার সাব-সেকটরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ২১ সদস্যের একটি দল বরগুনাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে বেতাগীর বদনীখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন তারা। এ সময় মুক্তিবাহিনীর এক সদস্যকে রেকি করার জন্য  বরগুনা পাঠানো হয়। তার সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে বিষখালী নদী দিয়ে বরগুনা রওনা হন। রাত তিনটার দিকে তারা বরগুনার খাকদোন নদীর তীরে পোটকাখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন।

বরগুনাকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনা কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারল্যাস স্টেশন, এসডিও’র বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। এরপর তারা হেঁটে বরগুনা শহরে এসে যে যার অবস্থান নেন। তাঁরা ফজরের আজানকে অভিযান শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন। আজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছয়টি স্থান থেকে একযোগে গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। রাজাকার এবং পাকিস্তানপন্থী পুলিশরা তখন নিরাপত্তার জন্য জেলখানায় আশ্রয় নেন। কোনও প্রতি উত্তর না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে জেলখানার দিকে অগ্রসর হন। জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে তারা যান তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনের বাসায়। এরপর ট্রেজারির সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ সকালে সাগর পাড়ি খেলাঘর আসর র‍্যালী প্রদক্ষিণ করে পৌর গণকবরে শহীদ বেদিতে  শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে। বিকেলে হানাদার মুক্ত দিবসের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলনের আয়োজন করেছে ভ্রমণ সেবা প্রতিষ্ঠান জলতরণী। সহযোগিতায় থাকবে আলোকশিখা বরগুনা।