ধানের শীষের ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রধান শিক্ষকের

  • পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ার পরই হঠাৎ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বসেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক প্রধান শিক্ষক। মুহূর্তেই হতচকিত দর্শক, তারপরই উপস্থিতদের মুখ চেপে ধরা হাসি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।

ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার চররূপপুর এলাকায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে। সিরাজুল ইসলাম লক্ষীকুন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ার পর শিক্ষকতার নৈতিকতা, সরকারি চাকরিজীবীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং অদ্ভুত স্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় না থেকেও উন্নয়ন করেছে, ক্ষমতায় গেলে আরও করবে। জিয়া ও খালেদা জিয়ার আমলে শিক্ষাখাতে নেওয়া উদ্যোগের কথা বলেও তিনি ধানের শীষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। বক্তব্য শেষে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া চান। এরপরই হঠাৎ উচ্চারণ করেন—জয় বাংলা, জয়…। কথা শেষ না করেই মাইক্রোফোন অন্যজনের হাতে তুলে দেন তিনি। সে মুহূর্তে উপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা মুখ টিপে হাসেন।

বিএনপির অনুষ্ঠানে জয় বাংলা স্লোগান-বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে। একজন প্রধান শিক্ষক সরাসরি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভোট চাওয়ায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, একজন শিক্ষা কর্মকর্তার রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ও দলীয় পক্ষে প্রচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি বিভিন্ন অনিয়ম আড়াল করতে ৫ আগস্টের আগে তিনি নিয়মিত আওয়ামী লীগপন্থী নেতাকর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ বিএনপি-সমর্থিত কর্মসূচিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। সমাবেশ-মিছিলেও তাকে দেখা যাচ্ছে। তার বক্তব্যেও পূর্বের রাজনৈতিক অবস্থানের ছাপ স্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি রাজনীতি করেন না এবং আগে কখনো করেননি। শিক্ষক হিসেবে রাজনৈতিক আয়োজনে গিয়ে দলীয় বক্তব্য দেওয়া তার ঠিক হয়নি। জয় বাংলা স্লোগান ভুলে বলে ফেলেছেন, এজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজন। তিনি বলেন, এটি স্থানীয় যুবসমাজের আয়োজন ছিল, দলীয় অনুষ্ঠান নয়। সিরাজুল ইসলাম ভুলে স্লোগান দিয়েছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি বিএনপির কেউ না, তাই তাদের পক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। এ ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।

দোয়া মাহফিলে প্রধান আলোচক ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সুমন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক এবং উপজেলা জাসাসের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস। শেষাংশে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা শরিফুল ইসলাম।

এসএইচ