সারাদেশে বৃক্ষ ও বনজরিপ শুরু

  • বাগেরহাট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৭:০১ পিএম

সুন্দরবনে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে বৃক্ষ ও বনজরিপ-২০১৬ শুরু হয়েছে। এ জরিপের আওতায় সারাদেশের প্রায় ১ হাজার ৮৫৮ স্থানে এ জরিপ কাজ চালানো হবে। প্রথম বছরে সুন্দরবন ও দেশের উপকূলীয় ও পাহাড়ী এলাকায় এ জরিপ কাজ করা হবে। পরের বছর দেশের অন্যান্য স্থানে এ জরিপ কাজ চালবে। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে সুন্দরবনের হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের কাছে পর্যটন জাহাজ, এমভি টাঙ্গুয়ার হাওরে অনুষ্ঠিত এ জরিপ কাজের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, এ জরিপ দেশের সরকারি বন ও গ্রামীণ বনের উন্নয়ন, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার দিকনির্দেশনা দিবে। পাশাপাশি সরকার তথা বন বিভাগ বনের অবক্ষয় রোধ এবং বনবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেখানে বিশেষ অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে বনের অবক্ষয়, বন উন্নয়ন এবং বন সংরক্ষণের বিভিন্ন পদক্ষেপ মূল্যায়নের জন্য বন জরিপ করা আশু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলী। বক্তৃতা করেন বিশেষ অতিথি বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, বিশেষ অতিথি খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসেন, ইউএসএআইডি-র প্রতিনিধি, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক জহীর ইকবাল, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও) চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধি মেথিউ হেনরি, খুলনার বন সংরক্ষক জহির উদ্দীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাসহ সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ।

বনবিভাগ সূত্র জানায়, বনজ সম্পদের সুরক্ষা, সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত, বনের আচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও), ইউএসএআইডি এবং সিলভাকার্বন। আগামী ২০১৮ সালে এ জরিপ কাজ শেষ হবে। এটিই প্রথম পরিপূর্ণ দেশের বনজসম্পদ জরিপ বা গবেষণা কার্যক্রম। এর আগে ২০০৫ সালে সারাদেশে এ ধরনের জপির কাজ চালানো হয়। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ কাজ ছিল না।

জরিপ কার্যক্রমের সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত জরিপ কাজ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই বনজ সম্পদ জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিভাগ। এই গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত বনজ সম্পদ কতটুকু আছে সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, এই গবেষণায় সারাদেশের গ্রামীণ বনজসম্পদের পরিমাণও জানা যাবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, এই জরিপ কার্যক্রমের প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বনজসম্পদ চিহ্নিতকরণ, পাঁচ বছর পরে আবার গবেষণা করে দেখা বনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং এই পরিবর্তনে কি কি প্রভাব কাজ করেছে। এছাড়া কার্বন কতটুকু আছে। এই কার্বন নি:সরণের জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও) চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মেথিউ হেনরি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বনজসম্পদ জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

বাংলাদেশ বনবিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে বনজসম্পদ জরিপ কাজ শুরু করেছি। আজ (শনিবার) সুন্দরবন থেকে এ জরিপ কাজ শুরু হচ্ছে। ইউএসএআইডি এ জরিপ কাজে অর্থায়ন করছে। এর মাধ্যমে বন ও বৃক্ষ জরিপ করা হবে। জরিপের মাধ্যমে আমাদের কি পরিমাণ বন ও কাঠ আছে তা জানা যাবে। এছাড়া কার্বন নির্ণয় করা গেলে আমরা বলতে পারবো-বাংলাদেশে কি পরিমান কার্বন মজুদ আছে। এর আগে, ২০০৫ সালে সারাদেশে এবং ২০০৯-১০ সালে শুধুমাত্র সুন্দরবনে জরিপ করা হয়েছিল। বর্তমান জরিপ কাজের সঙ্গে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে।

তিনি বলেন, সর্বোপরি এই জরিপ, দেশের সরকারি বন ও গ্রামীণ বনের উন্ননয়ন, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঠিকভাবে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
মংলা বন্দর সংলগ্ন সুন্দরবনের পাশে পশুর নদীর তীরে বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখনো এ ধরনের কোন জরিপ কাজ করা হয়নি। তবে জরিপ কাজ করা গেলে কোন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান কি ধরনের বর্জ্য নদীতে নিঃসরণ করছে এবং তাতে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে তা জানা যাবে। এর আগে ক্ষতির ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে না।

সন্ধ্যায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর