ফেনীর তিন উপজেলায় ৫২ গ্রাম প্লাবিত

  • মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ফেনী | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০১৭, ১০:০০ এএম

ফেনী: গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১১টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তিন উপজেলায় নতুন করে ৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার পরিবারকে ৮শ’ টন ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এদিকে ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন ১৬শ’ পরিবারকে শুকনা খাবার সরবরাহ করেছেন।

শনিবার (২২ জুলাই) সকালে ফেনী-১ আসনের সাংসদ শিরিন আকতার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মুহুরী নদীর বাঁধ পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করেন। একইদিন বিকেলে ফেনীর জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সহকারী পরিচালক আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবময় দেওয়ান, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার ও উপজেলা চেয়ারম্যান কিসিঞ্চার চাকমা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর ছয়টি স্থানে, কহুয়া নদীর চারটি স্থান ও সিলোনীয়া নদীর একটি স্থান ভেঙে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার ৫২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া পরশুরাম-ফেনী সড়কের অধিকাংশ জায়গার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের ২২টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের ৫৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, ফুলগাজী উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত ৭ টন চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৬’শ পরিবারকে শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে ফুলগাজী উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রি দেয়া হবে।

ফুলগাজী উপজেলার নীলক্ষি গ্রামের বাসিন্দা সাবেদা খাতুন, ছকিনা বেগম ও দেলোয়ারা বেগম জানান, ‘দশ কেজী চাল দিয়ে আমরা কয়দিন চলতে পারবো। আমাদের বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ১০ কেজী চাল শেষ হয়ে গেলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, যাদের পরিবারের পুরুষ মানুষ নেই; তারা সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রি থেকে বঞ্চিত হয়। গ্রামে মহিলাদের কেউ খোঁজ রাখেনা। যাদের ঘরে পুরুষ মানুষ আছে তারা সব পায়।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কহিনুর আলম জানিয়েছেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেসব পানি এলাকায় ঢুকে গেছে সেগুলো নিচু স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে নিচু এলাকাগুলোতে আরো কয়েক দিন পানি থাকবে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে পানি সরে যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে- উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, পুর্ব ঘনিয়ামোড়া, সাহাপাড়া, কিসমত ঘনিয়ামোড়া জয়পুর, দেড়পাডা, মালিপাথর, উত্তর নীলক্ষী ও দক্ষিণ নীলক্ষী, গোসাইপুর গ্রামের মানুষ বন্যার পানিতে আটকে আছে।

জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রি মজুদ আছে। ৩ উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত ৮ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও ফুলগাজী উপজেলায় নগদ এক লক্ষ টাকা, পরশুরাম উপজেলা ২৫ হাজার টাকা ও ছাগলানইয়া উপজেলায় ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন দুর্ভোগ লাগবে মাঠে কাজ করছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন