ঘাতক সিআইডি কনস্টেবকে খুঁজছে পুলিশ-গোয়েন্দারা

  • চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

চুয়াডাঙ্গা: জেলার আলমডাঙ্গায় শ্বাশুাড়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যাকারী সিআইডির কনস্টেবল অসীম ভট্টচার্যকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর পুলিশের কয়েকটি টিমসহ গোয়েন্দারা অসিমকে গ্রেফতারে হন্যে হয়ে খুঁজেও কোন কোন সন্ধান পাচ্ছেন না। তার দুটি ফোন নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। হত্যার কিছুক্ষণ পর তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিও ডিএ্যাক্টিভ করানো হয়েছে।

এর থেকে পুলিশ ধারণা করছে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভাবেই স্ত্রী ফাল্গুনীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সিআইডি কনস্টেবল অসীম। কিন্তু তাকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন বাঁধা দিতে গিয়ে খুন হন শ্বাশুড়ী শেফালী অধিকারী। হত্যাকান্ডের পর আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘাতক অসীমের শয়ন কক্ষ থেকে ২১ বোতল ফেন্সিডিল ও একটি ভারতীয় সীমকার্ড উদ্ধার করেছে।

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সি অসীম ভট্টচার্যের ঘর থেকে ফেন্সিডিল ও ভারতীয় সীমকার্ড উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের পর সিআইডি কনস্টেবল অসীম ভট্টচার্যের মাদক আসক্তির বিষয়টিও তাদের নজরে এসেছে। এছাড়া সে মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো খুব সর্তকতার সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলামকে। তিনি ইতিমধ্যে তার কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে নিহত শেফালী অধিকারীর স্বামী সদানন্দ অধিকারী স্ত্রী হত্যার অভিযোগে জামাতা সিআইডির কনস্টেবল অসীম ভট্টচার্যের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার রাতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন। যার নং-৪। মামলার এজাহারে তিনি দাবি করেছেন, দীর্ঘ ৯ বছর আগে অসীমের সাথে আমার মেয়ে ফাল্গুনীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে অসীম স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করে।

এ বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যেই তাদের কলহ দেখা দিতো। দিনে দিনে অসীম সেই সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়ে কারণে অকারণে আমার মেয়েকে শারীরিকও মানুষিক নির্যাতন চালাতো। ঘটনার দিন শুক্রবার রাতেও এই একই বিষয় নিয়ে গলার ওড়না জড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় ফাল্গুনীকে। এ সময় ফাল্গুনী কৌশলে ঘর থেকে বেড়িয়ে সামনে আমার বাড়িতে চলে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই অসীম আমার বাড়িতে এসে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে। এ সময় ফাল্গুনী গেট খুলতেই তাকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত শুরু করে অসীম। তাকে বাঁচাতে আমার স্ত্রী শেফালী অধিকারী, ছেলে আনন্দ অধিকারী এগিয়ে গেলে তাদেরকেও উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত শুরু করে। অসীমের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আমার স্ত্রী শেফালী অধিকারী।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। এজন্য অতি সর্তকতার সাথে তদন্তকার্য চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অসীমের প্রতিবেশীসহ বেশ কয়েকজনকে থানাতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাড়ি মালিক সুকেশ কুমার সাহা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে স্ত্রীর পরোকীয়ার কারণে এ হত্যাকান্ড নাকি ঘটনার নেপথ্যে অন্য কারণ আছে এমন প্রশ্নে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

তবে ঘাতক অসীম ভট্টচার্যের শ্বশুর পক্ষের স্বজনদের দাবি নিজের ভাবির সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া চালিয়ে আসছিলো অসীম। এটি নিয়েই বিরোধ বাঁধতো। সেটি ধামাচাপা দিতে উল্টো স্ত্রী ফাল্গুনীকেই পরকীয়ার অভিযোগ এনে নির্যাতন চালানো হতো। স্বজনদের পাশাপাশি অভিন্ন অভিযোগ অসীমের শ্বশুড় সদানন্দ অধিকারী ও শ্যালক আনন্দ অধিকারীরও।

রোববার সকালে আলমডাঙ্গার মাদ্রাসা পাড়ায় (অসীমের ভাড়া বাসা এলাকায়) সরেজমিন অনুসন্ধান করেও হত্যাকান্ডের বিষয়ে তেমন কোন নতুন তথ্য মেলেনি। তবে স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন স্ত্রী ফাল্গুনী অধিকারীর ফোন ব্যবহার পছন্দ করতেন না স্বামী অসীম।

স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ উল্লাহও এমন তথ্য দিয়ে জানান, এই বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতো। গন্ডগোলও লাগতো। চিৎকার চেচামেচি শুনা যেত।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে কনস্টেবল অসীম ভট্টচার্য। তাকে গ্রেফতারে আমরা প্রযুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি। পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম সাদা পোশাকে কাজ করছে। এর বাইরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়েছে। খুব দ্রুতই তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।

এদিকে, নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্বাশুড়ীকে খুনের অভিযোগ ও স্ত্রী -শ্যালককে আহত করার ঘটনায় অসীম ভট্টচার্যকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে শনিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের মাদ্রাসা পাড়ার ভাড়াটিয়া বাসাতে শ্বাশুড়ী শেফালী অধিকারীকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে চুয়াডাঙ্গা সিআইডিতে কর্মরত কনস্টেবল অসীম ভট্টচার্য। একই সাথে স্ত্রী ফাল্গুনী অধিকারী ও আনন্দ অধিকারীকেও খুনের উদ্দেশ্যে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে জখম করা হয়। পরে তাদের দুই জনকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়া আড়াইশ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে রাজশাহী মেডিক্যালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকেই লাপাত্তা রয়েছেন অভিযুক্ত অসীম ভট্টচার্য।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন