পেঁয়াজ ঘাটতি এখনো বারোআনা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০১৯, ০১:৫৬ পিএম

ঢাকা : পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ও জোগান কতটুকু তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেশের কোনো সংস্থার কাছে নেই। এটিও পেঁয়াজের চলমান সংকট নিরসনে একটি বড় দুর্বলতা। তারপরও বিভিন্ন সংস্থার বিচ্ছিন্ন সব তথ্য সমন্বয় করে দেখা যাচ্ছে— এখনো বারোআনা ঘাটতিতে রয়েছে দেশের পেঁয়াজের জোগান।

তথ্য বলছে, বছরে গড়ে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশে উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ হয়। বাকিটা আসে আমদানির মাধ্যমে। এর মধ্যে দেশের পণ্যটির ভরা মৌসুমে আমদানির প্রয়োজন কমে আর বাড়ে মৌসুম শেষে।

অন্যদিকে প্রতিদিন দেশে পেঁয়াজের চাহিদা সাড়ে ছয় হাজার টন হিসাবে মাসিক চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় দুই লাখ টনের কাছাকাছি। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের মৌসুমের শেষে এই সময়টায় মাসে কমপক্ষে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি প্রয়োজন হয়, গত বছরও আমদানির পরিমাণ এমনটা ছিল।

কিন্তু এখন গড়ে পেঁয়াজের আমদানি নেমেছে মাসিক ২৪ থেকে ২৫ হাজার টনে। অর্থাৎ আমদানির পেঁয়াজের বারোআনা এখনো ঘাটতি।  

বাণিজ্য মন্ত্রাণালয় বলছে, পেঁয়াজের সংকট শুরুর পর গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমদানি হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ। যেখাতে গত বছর এই দুই মাসে দুই লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ এসেছিল।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা কত সেটা পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে বছরে পেঁয়াজের ন্যূনতম চাহিদা অন্তত ১৯ লাখ টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রায় ২২ লাখ টন। আর বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প্রাক্কলন অনুসারে বার্ষিক চাহিদা অন্তত ২৪ লাখ টন।

চাহিদার মতো উৎপাদনের পরিসংখ্যানটাও গোলমেলে। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব অনুসারে, এই সময়ে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন।

মানে দুই সরকারি সংস্থার হিসাবে, পেঁয়াজের উৎপাদনে ৬ লাখ টন গরমিল, যা বিভ্রান্তি তৈরির জন্য যথেষ্ট। তবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের অন্তত ২৫ শতাংশ নষ্ট হয় যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে। ফলে দেশীয় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ বাজারে আসে। এটি বিবেচনায় নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব মানলে বছরে ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা প্রয়োজন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপাত্ত অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এ বছর সে পরিমাণ আরো বাড়বে নিশ্চয়। অর্থাৎ গড়ে প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

তবে এ বাস্তবতা অবশ্য সরকারি কোনো কোনো সংস্থা মানে না। এখনো পেঁয়াজের বড় ঘাটতির কথা তারা মেনে নিতে পারছে না। এর মধ্যে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) এখনো বলছে, পেঁয়াজের আমদানি ও মজুত স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। এমনিভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলছেন, বাজারে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। পেঁয়াজেরও নেই।

যদিও একই দিনে ব্যবসায়ী সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অন্য বছরের এ সময়টায় প্রতি মাসে এক লাখ টন করে পেঁয়াজ আমদানি হতো। এখন ২৪ থেকে ২৫ হাজার টন করে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক আমদানির চেয়ে কম হয়েছে ৭৫ হাজার টনের মতো।

অন্যদিকে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে বড় শিল্প গ্রুপগুলোর জোগানও নগণ্য। এ পর্যন্ত মাত্র ৪০০ টন পেঁয়াজ আকাশপথে আমদানি করেছে গ্রুপগুলো। পাঁচ দিনে আনা এ পেঁয়াজ দিয়ে বড় একটি বাজারের জোগানও মেটানো যাবে না। কারণ শ্যামবাজারেই প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। যদিও গ্রুপগুলো বুধবার যখন উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছিল, সে সময় পাঁচ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এমন পরিস্থিতিতে আবারো বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। দুদিনে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বাজার ও ঢাকার বাইরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের সরবরাহ বেশ কম। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০-২৫০ টাকা, মিসরীয় ও চীনা ভালো মানের পেঁয়াজ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

অন্যদিকে রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী নতুন করে আবারো পেঁয়াজের দাম কমার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ১০ দিনের মধ্যে আমদানি করা বড় চালান এসে যাবে ও দেশি পেঁয়াজ উঠবে। যদিও এমন আশ্বাস মানুষ আগেও পেয়েছে।

কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা লিয়াকত বলেন, দেশি পেঁয়াজ একেবারেই নেই। খুব সংকট চলছে। আর বিদেশি পেঁয়াজের চাহিদা খুব কম। সরবরাহ সংকটেই দাম বাড়ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই