করোনার মধ্যেও যে কারনে ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২০, ১১:৩৫ এএম

ঢাকা : করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের স্থবিরতা ছিল। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয় ঋণে ৯ ও আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার। এ দুইয়ের প্রভাবে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাবে বলে ধরনা করা হলেও আগের বছরের একইসময়ের তুলনায় চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’২০) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬২ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়েছে।

এ সময় কোন কোন ব্যাংকের ইপিএস ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। অপরদিকে ইপিএসে পতনে সবার উপরে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ৯ মাসের অনিরীক্ষিত সমন্বিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের ৯ মাসের ব্যবসায় ২৯টির আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের পর্ষদ সভার এ সংক্রান্ত তারিখ ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করা হয়েছে। আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা ২৯ ব্যাংকের মধ্যে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের ৯ মাসে ১৮টি বা ৬২.০৭ শতাংশ ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে। আর ১০টি ব্যাংকের ইপিএস কমেছে। এছাড়া ১টি ব্যাংকের আগের বছরের থেকে লোকসান কম হয়েছে।

কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণখেলাপি করার সময়সীমা অন্য সব খাতের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়।  একই সাথে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণেও ব্যাপক ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ছাড়ে অধিকাংশ ব্যাংকের আয় বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসীলি ব্যাংকগুলোকে ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি সিএমএসএমই খাতের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণেও ছাড় দেওয়া হয়। বেশ আগে থেকে সিএমএসএমই খাতের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। তা অপরিবর্তিত রাখা হয়। অন্য সব খাতের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে যেখানে রাখতে হয় এক শতাংশ। সিএমএসএমই খাতের সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে। আগে অন্য সব খাতের মতো এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো। সিএমএসএমই খাতের সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে রাখতে হবে ২০ শতাংশ। আগে যেখানে ৫০ শতাংশ রাখতে হতো। তবে মন্দ মানে শ্রেশীকৃত ঋণের বিপরীতে বর্তমানের মতোই শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করে ঋণ বিতরণ করে থাকে। বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। আমানতের নিরাপত্তা ও ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অধিক সতর্ক থাকে। কিন্তু প্রভিশনের হার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে আগের চেয়ে কম অর্থ সংরক্ষণ করায় এই অর্থ চলে গেছে ব্যাংকের মুনাফায়। যদিও এটিকে কৃত্রিম মুনাফা হিসেবে চিহ্নিত করছেন ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা।

যেসব ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে : আগের বছরের একইসময়ের তুলনায় চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর’২০) সবচেয়ে বেশি ইপিএস বেড়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৪৬৩ শতাংশ ইপিএস বেড়েছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৫ শতাংশ বেড়েছে এক্সিম ব্যাংকের। আর ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৩য় স্থানে রয়েছে ওয়ান ব্যাংক।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, প্রভিশন কম রাখার কারনে আয় বেড়েছে। আর আয় বাড়ায় ইপিএসও বেড়েছে।

এদিকে সবচেয়ে বেশি ইপিএস হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আগের বছরের থেকে ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ৬.২৯ টাকা। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.০৮ টাকা ইপিএস হয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের। আর ৩.১৮ টাকা ইপিএস নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যমুনা ব্যাংক।

এছাড়াও আলোচিত সময়ে এবি ব্যাংকের ৬১%, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫৯%, রূপালি ব্যাংকের ২৫%, উত্তরা ব্যাংকের ২০%, দি সিটি ব্যাংক ১৮%, ঢাকা ব্যাংকের ১৫%, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১৪% ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১৩% ইপিএস বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে যমুনা ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে ১০%, পূবালী ব্যাংকের ৮%, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের ৮%, ইসলামী ব্যাংকের ৫%, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৩%, ব্যাংক এশিয়ার  ২%, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১%।

যেসব ব্যাংকের ইপিএস কমেছে : ২০২০ সালের ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি হারে ইপিএস কমেছে আইএফআইসি ব্যাংকের। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির ইপিএস কমেছে ৪২ শতাংশ। এরপরে ৩১ শতাংশ কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক। আর ২৮ শতাংশ কমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

আলোচিত সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৪% ইপিএস কমেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের ২০%, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১৫%, সাউথইস্ট ব্যাংকের ১৫%, এনসিসি ব্যাংকের ১৩% এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৯%।

অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরের ৯ মাসেও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় লোকসানের পরিমাণ কম হয়েছে। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ০.১৫ টাকায়, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ০.৪৯ টাকা।

সোনালীনিউজ/এলএ/এমএইচ